ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে গার্মেন্ট শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে পিটিয়ে-আগুনে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় শাহাবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে এ
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার।
এতে সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সহ-সভাপতি অঞ্জন দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী ও সহ-সম্পাদক প্রবীর সাহা এবং প্রচার সম্পাদক হযরত বিল্লাল।
এছাড়াও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা সাদেকুর রহমান শামীম, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সম্পাদক জুলহাস নাইন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জুলাইয়ের অন্যতম ছাত্রনেতা সৈকত আরিফ, যুব ফেডারেশের আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা, কৃষক মজদুর সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক রেজা ও ছাত্রনেতা আরমনুল হক।
সভায় বক্তারা বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় পাইওনিয়ার নিটওয়্যার বিডি লি. গার্মেন্টের শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ তুলে কারখানার ভেতর থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে দঙ্গলবাজদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
দীপু চন্দ্র দাসকে নির্মমভাবে পেটানোর পরে গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নেতৃবৃন্দ গভীর ক্ষোভ, শোক ও তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা বলেন, এটি শুধু নৃশংস একটি শ্রমিক হত্যাই নয়—এটি রাষ্ট্রীয় আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর সরাসরি আঘাত।
নেতৃবৃন্দ, ওসমান হাদীকে গুলি করে হত্যা এবং দীপু চন্দ্র পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা সারা দেশে জনগণের জীবনের নিরাপত্তাহীনতাকেই আবারো সামনে হাজির করে।এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দীপু চন্দ্র হত্যা, হাদী হত্যা এবং প্রথম আলো-ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিক নুরুল কবীরের ওপর হামলাকে একই সূত্রে গাঁথা বলে অভিহিত করেন বক্তারা।
তারা বলেন, দেশে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করে ভয়ের সংস্কৃতি ছড়ানোর জন্য একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে উস্কানি ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ঘোষণা দেয়। যার বলি হন দীপু চন্দ্র, হাদি ও গণমাধ্যম-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।
অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
নেতৃত্ব আরও বলেন, ঘটনার ধারাবাহিকতা স্পষ্ট—এটি কেবল কোনো ‘উত্তেজিত জনতার’ আকস্মিক কাজ নয়; এটি সংঘবদ্ধ অপরাধ। এই দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে আরও শ্রমিক এভাবে হত্যার শিকার হবে। একই সাথে দীপু চন্দ্রের পরিবারকে এক জীবনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান তারা।