ম্যাচসেরা রিশাদ যে কারণে অনন্য

ম্যাচসেরা রিশাদ যে কারণে অনন্য

বাংলাদেশ দলে লেগ স্পিনারের দেখা মেলে কালেভন্দ্রে। কিন্তু টিকে থাকার উদারহণ তো আরও কম।এতদিনেও দলে পাকাপাকি জায়গা দখল করার মতো লেগ স্পিনারের দেখা মেলেনি। তবে এবার সেই আক্ষেপ ঘোচানোর ইঙ্গিত দিলেন রিশাদ হোসেন নামের এক তরুণ।

আজ ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচটি ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ম্যাচটি ২ উইকেটে জিতে নিয়েছে টাইগাররা। ম্যাচটি খেলতে নেমেই একটি কীর্তিতে নাম লেখান রিশাদ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হওয়া প্রথম বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার এখন তিনি।  

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবশ্য আরও একজন লেগ স্পিনার দেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাকে ঠিক বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার নয়, দেখা হতো অলরাউন্ডার হিসেবে। তাছাড়া সেবার মাত্র এক ম্যাচে বোলিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন কাপালি।  

ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে নিজের অভিষেক ম্যাচটাও স্মরণীয় করে রাখলেন রিশাদ। দশকের পর দশক যে দৃশ্যের অপেক্ষায় ছিলেন সমর্থকরা, সেই লেগ স্পিনের জাদু দেখালেন এই তরুণ স্পিনার। কবজির মোচড় এবং বল কন্ট্রোলে মোহিত করলেন তিনি। ব্যাটিংয়ে তাওহিদ হৃদয়ের ঝড় ও মাহমুদউল্লাহর অসাধারণ ক্যামিওর পরে জয়; রিশাদের কথা হয়তো ভুলিয়েই দেওয়ার কথা। কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোনো লেগ স্পিনারের ম্যাচ জেতানোর মতো তেমন পরিচিত দৃশ্য নয়। রিশাদ সেই অপরিচিত দৃশ্যের জন্ম দিয়েই নিজের আগমনী বার্তা দিয়ে রাখলেন যেন।

লঙ্কানদের ইনিংসের অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে আসেন রিশাদ। ওই ওভারে দেন ৭ রান। এরপর ফের আক্রমণে আসেন একাদশ ওভারে। এবার কোনো উইকেটপাননি, রান দেন ৯টি। তবে ১৫তম ওভারে এসে প্রথম দুই বলেই তুলে নেন উইকেট। আগের ওভারেই ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন চারিথ আসালাঙ্কা। লঙ্কান এই বাঁহাতি ব্যাটার এবার প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন।  

স্লগ সুইপে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে উড়িয়ে মেরেছিলেন আসালাঙ্কা। তবে সেখানে থাকা সাকিব আল হাসান দুইবারের প্রচেষ্টায় বল তালুতে জমা করেন। পরের বলটি এককথায় দুর্দান্ত। বল লেগে পিচ করে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে থাকা সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়লো। ওই ওভারে মাত্র ৩ রানে ২ উইকেট নেন রিশাদ।

১৭তম ওভারে ফের রিশাদ-ঝলক। এবার প্রথম বলেই তার স্পিন জাদুতে কুপোকাত ধনাঞ্চয়া ডি সিলভা। ওই ওভারে আর উইকেট না পেলেও মাত্র ৩টি সিঙ্গেল নিতে দিয়েছেন রিশাদ। শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট, বিশ্বকাপ অভিষেকেই এমন দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর ছিল বড় পুরস্কারের অপেক্ষা, অর্থাৎ ম্যাচ জয়। যা পরে হয়েছে এবং রিশাদ হয়েছেন ম্যাসেরা।  

রিশাদের পাশাপাশি বোলিংয়ে তার অভিজ্ঞ সঙ্গী মোস্তাফিজুর রহমানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের চাপে শ্রীলঙ্কা ১২৪ রানেই আটকে যায়। মোস্তাফিজের এমন চাপ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে অনেক আগে থেকেই। তবে গত বছরের মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হওয়া রিশাদের জন্য অভিষেকের মাত্র কয়েক মাস পরেই বিশ্বকাপ ম্যাচের চাপ নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।  

রিশাদ শুধু চাপ-ই নেননি, করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিংও। আত্র কারণেই ১৪ ওভারে ১০০ করে ফেলা শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে করতে পারে ১২৪ রান। যে বোলিং পারফরম্যান্স তাকে এনে দিয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কারও। বিশ্বকাপের মতো বিশাল মঞ্চে নিজের অভিষেক ম্যাচেই ম্যাচসেরা হওয়া, তা-ও আবার বাংলাদেশের লেগ স্পিনার হিসেবে। এটাও একটা রেকর্ড বটে! 

ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে অবশ্য সাদামাটা প্রতিক্রিয়া দিলেন রিশাদ। বললেন, ‘আমি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং নিজের শক্তির জায়গায় অটল থাকতে চেয়েছি। ’ 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS