পশ্চিমবঙ্গের শৈল শহর দার্জিলিং। সেখানে সারা বছরই ভিড় লেগে থাকে বাংলাদেশি পর্যটকদের।ভারতে দীপাবলির উৎসব অর্থাৎ শীতের শুরুতে সেই ভিড় আরও বেড়ে যায়। শিলিগুড়ির ফুলবাড়ি চেকপোস্ট ও কোচবিহার চ্যাংড়াবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে অতি সহজেই বাংলাদেশের পর্যটকরা দার্জিলিংয়ে যাতায়াত করে থাকেন।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) থেকে দীপাবলি উৎসব শুরু হয়ে গেছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে দেখা নেই বাংলাদেশি পর্যটকদের। তা সে কলকাতা হোক, কিংবা শৈল শহর, কোনোখানেই এবার দেখা নেই বাংলাদেশিদের। এতে মাথায় এক প্রকার হাত হোটেল ব্যবসায়ীদের।
এ মুহূর্তে যে কজন বাংলাদেশি কলকাতায় অবস্থান করছেন, তারা চিকিৎসার কারণে এসেছেন। তাও আবার তাদের পুরোনো ভিসায়। রোগী তো আর ভ্রমণ করতে পারেন না। তাই চরম লোকসানে আছেন মারক্যুইস স্ট্রিটের ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা। যাদের মূল আয়ের পথ ছিল বাংলাদেশিদের কাছে বিমান ও ট্রেনের টিকিট বিক্রির কমিশন।
সেপ্টেম্বর থেকেই বাংলাদেশি নেই কলকাতায়। এতে বড় সমস্যায় পড়েছেন এখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা। বিশাল আয়োজনে কর্মচারী নিয়ে হোটেল খুলে রাখলেও ভারতীয় ভিসার জটিলতায় দেখা নেই বাংলাদেশি অতিথিদের।
এ বিষয়ে মারক্যুইস স্ট্রিটের এমারেল্ড হোটেলের মালিক মনোতোষ বলেন, একটি হোটেলের বিদ্যুৎ খরচ, কর্মচারীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ সবমিলিয়ে কমপক্ষে প্রতিমাসে আড়াই থেকে তিন লাখ রুপি খরচ। এখন সেই টাকাই পকেট থেকে দিতে হচ্ছে।
বাঙালিদের ভাতের হোটেল ‘রাঁধুনি’র ম্যানেজার বলেন, এ অঞ্চলে ভাতের হোটেলগুলো চলেই বাংলাদেশিদের জন্য। তারাই তো নেই। কতদিন রাঁধুনি, কর্মচারীদের পকেটে বেতন দেওয়া যাবে, তা নিয়ে আমি চিন্তিত।
কলকাতার নিউমার্কেটে রয়েছে কমবেশি দুই হাজার হোটেল। আছে দুইশর মতো মানি এক্সচেঞ্জ। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার লোক মারক্যুইস স্ট্রিট অঞ্চলে এসব পেশায় জড়িত। যাদের মূল অর্থনীতি নির্ভর করে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর। অথচ এ বিশাল অঞ্চলে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ বাংলাদেশি।
শীতের শুরুতে বাংলাদেশি পর্যটকেরা দার্জিলিংমুখী হয়ে থাকেন। প্রতি বছর এ সময় কুয়াশায় ঢাকা পাহাড় দেখতে ভিড় জমান বাংলাদেশের অংসখ্য ভ্রমণপিপাসু। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখার আকর্ষণ অন্য মাত্রা পায়। সারা পৃথিবীর মানুষ আসে শৈল শহর দার্জিলিংয়ে, সেই তালিকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল হলেও ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশে ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ চালু করেনি। জরুরি অবস্থাতেই কেবল ভারতে আসার অনুমতি পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।
উত্তরবঙ্গের ট্যুরিজম ব্যবসায়ী অমিত চক্রবর্তী বলেন, দুই মাসের বেশি হয়ে গেল। বাংলাদেশের ট্যুরিস্ট প্রায় নেই বললেই চলে। আগের বছরও আমাদের এজেন্সিতে ভিড় উপচে পড়ে। জায়গা দিতে পারিনি। কিন্তু এখন আর বাংলাদেশিদের বুকিং আসছে না।
তিস্তা থেকে শুরু করে সংকোশ পর্যন্ত ডুয়ার্স এলাকায় ২০০ টিরও বেশি ছোটবড় রিসোর্ট রয়েছে। আছে শতাধিক হোম-স্টে। অনেক বাংলাদেশি নাগরিক শীতের প্রাক্কালেই ডুয়ার্সমুখী হন নৈসর্গিক শোভা উপভোগ করতে। কিন্তু এখন ডুয়ার্সেও বাংলাদেশি পর্যটকদের দেখা নেই। এখানকার ছোটখাট দোকানগুলোতেও তার প্রভাব পড়েছে।