পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, অন্যদিকে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় হওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ। তবে দ্বিপক্ষীয়ভাবে দিল্লির সঙ্গে টানাপোড়ন কমাতে চেষ্টার কথাও বলছেন তিনি।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দিল্লি-ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাখ্যায় এমনটি জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বাংলাদেশে ক্ষমতা পালাবদলের মধ্য দিয়ে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়ন চলছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় হচ্ছে কি না- জানতে চাওয়া হয় অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে।
উপদেষ্টা বলেন, এ দুটির একটিকেও আমি ঠিক মানছি না। আমি মনে করি, কোনো এক পর্যায়ে, কোনো এক কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে একটু টানাপোড়েন ছিল। স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক যদি উন্নীত হয়, আমাদের সবার খুশি হওয়া উচিত। আমরা তো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। পাকিস্তানের সঙ্গে তো এখন আমাদের শত্রুতা করে কোনো ফায়দা নেই।
তৌহিদ হোসেন বলেন, আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আপনারা যদি মনে করেন একটু টানাপোড়েন চলছে, সেটা দ্বিপাক্ষিকভাবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে সেটাকে কিনারায় নিয়ে আসতে। তবে আমরা একটি কথা মনে করি, সম্পর্ক মানুষ (জনগণ) কেন্দ্রিক হতে হবে। আসলে এমন হতে হবে, যেন মানুষও মনে করে যে, সম্পর্কটা ভালো।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সোনালি অধ্যায়ের কথা বলা হতো। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় ছিল দুই সরকারের মাঝে। আমরা চাই, সুসম্পর্ক থাকুক জনসাধারণের পর্যায়ে, মানুষ সেটায় যুক্ত হোক। মানুষ মনে করুক, আসলে খুব ভালো সম্পর্ক। সেটি যে ছিল না, তা স্বীকার করা ভালো। মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছিল, সেগুলো প্রশমন করা সম্ভব দুই পক্ষেরই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে বলে আমি মনে করি।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটি তো বিচার করবেন আরও অনেক পরে। তখন দেখবেন যে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না। এ মুহূর্তে আমরা একটি পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এখন আপনি বিচার করতে পারবেন না, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি কিনা। তাৎক্ষণিক আমি কোনো সমস্যা দেখছি না।
ভারতীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় যেটা হয়েছে, সেটা একেবারে মিথ্যা ও বাড়াবাড়ি। বিপ্লব সাধিত হওয়ার পর কিছু বিশৃঙ্খলা থাকে। এখানে একটা বিপ্লব হয়েছে। এটা মেনে নিতে হবে। কিছু বিশৃঙ্খলা ছিল, সেখানে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যেভাবে লেগে পড়েছিল…বিশ্ব মিডিয়ায় যারা নিরপেক্ষ তারা কেউ কিন্তু ভারতীয় লাইনটিকে গ্রহণ করেনি। ভারতীয় মিডিয়া হাইপ সৃষ্টি করেছিল। আমার মনে হয়, আমরা সেই স্টেজ পার হয়ে এসেছি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখনো দিল্লিতে আছেন কি না বা তিনি অন্য কোথাও চলে গেলে জানতে পারবেন কি না-এ প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, তার সঙ্গে তো আমাদের কোনো চ্যানেল নেই। তিনি ভারতের আশ্রয়ে আছেন। যদি তিনি অন্য কোনো দেশে চলে যান, সেটা তো আপনাদের আমার কাছ থেকে জানতে হবে না। আপনারা নিজেই জানতে পারবেন। আপনারা যেভাবে জানবেন, আমিও হয়তো সেভাবে জানব। কারণ, এটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পত্রপত্রিকায়, মিডিয়ায় চলে আসবে। এ নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর টানাপোড়েন চলছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছিল। স্বীকার করে নেওয়া ভালো। যেসব ইস্যুতে টানাপোড়ন চলছিল, সেগুলো কিন্তু এ সরকারের যে এজেন্ডা আছে বা ছাত্র-জনতার যে এজেন্ডা এসেছে, তার সঙ্গে কিন্তু সঙ্গতিপূর্ণ। আমি চূড়ান্তভাবে কোনো দ্বন্দ্বের সুযোগ দেখি না। তারা (পশ্চিমারা) যেসব ইস্যুতে উদ্বিগ্ন ছিল, আমাদের ছাত্ররা সেসব ইস্যুতেও উদ্বিগ্ন ছিল।