বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাঙালি হিসেবে বিশ্বের বুকে আমাদের স্বীকৃতি ও পরিচয়ের জায়গাকে সুদৃঢ় করেছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আজ বিশ্বব্যাপী মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি এলে বিশ্বে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
এ দিন বিশ্বের বিভিন্ন জাতি তাদের নিজেদের মাতৃভাষার কথা আলোচনা করলেও সবার প্রথমে কিন্তু আলোচিত হয় আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষা সম্পর্কে । বাংলা ভাষা আমাদের ইতিহাসের মৌলিক উপাদান। তবে বর্তমানে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে পৃথিবীতে সবকিছুই যেন হাতের মুঠোয়।
আর এই বিপুল তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে আমাদের সন্তান বা প্রজন্ম আজ বন্দি হতে বসেছে অ্যানড্রয়েড মোবাইলের স্ক্রিনে। সন্তানদের ভবিষ্যতের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নতুন এ বিশ্বসংস্কৃতির ধারা। , যা আমাদের সন্তানদের তাদের শেকড় থেকে আলাদা মৌলিক চিন্তা-চেতনার নানা বিষয় থেকে।
আর আমাদেরই দায়িত্ব আমাদের সম্তানদেের শেখানো যে আমাদের সংস্কৃতি আর পরিচয়ের মূলে রয়েছে আমাদের এই প্রাণপ্রিয় বাংলাভাষা।
যদি আমরা এখনিই বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের সন্তানের মধ্যে আবেগ- অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে না পারি তাহলে সহজেই আমাদের পারস্পরিক বন্ধন নড়বড়ে হয়ে আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে উপড়ে ফেলা যাবে।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যায়, বর্তমানে আমাদের সমাজের বেশির ভাগ সন্তান বাংলা ভাষার প্রতি অসচেতন হয়ে প্রযুক্তির নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। এতে বাংলা ভাষাকে যেন এক ধরনের পঙ্গুত্ব গ্রাস করছে।
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমাদের সন্তান ইংরেজির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলছে। যার প্রেক্ষিতে বাংলা ভাষাকে যেন ভুলতে বসেছে অনেকই। যা মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়।
একটি শিশু হয় একটি চারাগাছের মতো। শৈশবকালে যেভাবে পরিচর্যা করা হবে, তা তার পরবর্তী জীবনে সেভাবেই প্রভাব ফেলবে।
জন্মের পরপরই শিশুকে বিভিন্ন ইংরেজি শব্দ ও বাক্য শেখানো হয়। এছাড়া প্রায় পরিবারের শিশুদের ভর্তি করা হচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বহু অনুমোদনহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। ফলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বাংলা ভাষাকে শুদ্ধচর্চা করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একজন শিশুকে যখন জন্মের পর থেকেই ইংরেজি শিক্ষার আগ্রহী করে তোলা হবে ,ভবিষ্যতে সে বাংলা ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না এটাই তো স্বাভাবিক।
তার মধ্যে দেশের প্রতি,দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে আগ্রহ পাবেনা। আর যা আমাদের সুষ্ঠু ও শিক্ষিত জাতি গঠনে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে।
আর একটি উন্নত দেশ ও জাতি পেতে চাইলে কেবল প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিলেই হবেনা, বরং বাংলা ভাষাকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে এবং সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে তাদের গড়ে তুলতে বাংলাভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।
আর তাই শিশুসন্তানের মানসিক বিকাশে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, বাংলা ভাষার পণ্ডিত ও সচেতন অভিভাবকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে হলে শিশুর মনোজগৎকে পরিশুদ্ধ করতে, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করে একটি সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানোর প্রয়াশে অবশ্যই বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা করতে হবে।