রাজধানী হ্যানয়সহ ভিয়েতনামের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৭৯ জন। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশটির সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া প্রবল বর্ষণে রেড রিভার নদীর পানি রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যায় ডুবে গেছে হ্যানয়ের অধিকাংশ এলাকা।
এখনও প্রায় ১২৮ জন নিখোঁজ রয়েছে। আড়াই লাখ হেক্টরেরও বেশি জমির ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত দুর্যোগ কর্মকর্তারা একটি অফিসিয়াল রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
দক্ষিণ চীন সাগরের একটি নিম্নচাপ থেকে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় ইয়াগি ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে আছড়ে পড়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে। এ ঘূর্ণিঝড়কে চলতি বছর আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
ভিয়েতনামে আসার আগে ফিলিপাইনের লুজন প্রদেশ এবং চীনের কোটু দ্বীপেও তাণ্ডব চালায় ইয়াগি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আবহাওয়া সংস্থার কর্মকর্তাও বলছেন, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এশিয়ায় যত ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে, সেসবের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ইয়াগি।
গত শনিবার সকালে উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানার পর রাজধানী হ্যানয়ের দিকে এগোতে শুরু করে ইয়াগি। যেসব এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়টি গিয়েছে, সেসব এলাকায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ২৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছিল বলে জানিয়েছেন দেশটির আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও ভূমিধসের বিষয়ে সতর্ক করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সময় রোববার হোয়া বিনহ প্রদেশে একটি বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়ার ঘটনায় একই পরিবারের চার সদস্য নিহত হন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ভিএনইএক্সপ্রেস জানায়, ইয়াগির প্রভাবে কয়েক ঘণ্টা টানা বৃষ্টিপাতের পর মধ্যরাতের দিকে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।
গত সোমবার থেকে শক্তি হারানো শুরু করে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকে। ব্যাপক বর্ষণের জেরে হ্যানয়ের পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া রেড রিভারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পানি রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পরিচালক মাই ভ্যান কিয়েম বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, রেড রিভার নদীর পানি গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এছাড়া অন্যান্য নদীতে পানি বেড়েছে বিপুল পরিমাণে।
নদীতে পানির প্রবাহ রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় বন্যা এবং ভূমিধস শুরু হয়েছে রাজধানী হ্যানয়সহ বিভিন্ন প্রদেশে। দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের কর্মীরা ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। নিয়মিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল ও সরকারি ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন লোকজন। বন্যার কারণে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
টাইফুন ইয়াগির প্রভাবে চীনের হাইনানে ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যায়। হাইনানে ঝড়ের কারণে হতাহতের ঘটনাও ঘটে।