খাবারের অভাবে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সীমান্তের একটি গ্রামে ঢুকে পড়ে দুটি হাতি। আর তা দেখতে গিয়ে সেই বন্যহাতির তাণ্ডবের শিকার হয়ে নুরুজ্জামান নামে (২৩) এক মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের এক ভুট্টা ক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একই সঙ্গে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে গ্রামজুড়ে।
জানা গেছে, নিহত প্রতিবন্ধী নুরুজ্জামান একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যের অভাবে হাতিগুলো ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বন্যহাতি আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে সীমান্ত এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড় জমতে থাকে।
এদিকে হাতিটিকে স্থানীয়রা ভুট্টা ক্ষেত থেকে বিতাড়িত করতে হট্টগোল করে এগিয়ে গেলে হাতিটি তাণ্ডব চালায়। এর মাঝে হাতি দেখতে আসা নুরুজ্জামান ভিড়ের মাঝে পড়ে যায়। পরে পালাতে না পারায় হাতিটি তাকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ছুড়ে মারে। কিছু সময় পর স্থানীয়রা তাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে ভুট্টা ক্ষেত থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় সে মারা যায়। এর আগে সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। তবে থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উপস্থিতিতে এমন ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন জেগেছে।
স্থানীয়রা বলছে, প্রশাসন উৎসুক জনতাকে আশপাশ থেকে সরানোর ব্যবস্থা করলে অনাকাঙ্ক্ষিত এ দুর্ঘটনা ঘটতো না।
এর আগে উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের ইসলামবাগ প্রধানপাড়া গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশের লোকালয়ে প্রবেশ করে ছয় থেকে সাত গ্রাম অতিক্রম করে কাশিমগঞ্জ গ্রামে পৌঁছায় হাতি দুটো।
নিহতের চাচাতো ভাই শহিদ ও আকবর আলী বাংলানিউজকে বলেন, দুইটি হাতি আমাদের গ্রামে এলে অনেক লোক তা দেখতে ছুটে আসে। এর মাঝে মানুষের হট্টগোল শুরু হলে হাতিটি তাণ্ডব শুরু করে। এতে পাশে থাকা আমার চাচাতো প্রতিবন্ধী ভাই পালানোর চেষ্টা করলে হাতিগুলো দ্রুত ছুটে এসে তাকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ছুড়ে মারে। ঘটনার পর পর আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. রহিমুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, তাকে প্রথমে হাসপাতালে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত রংপুর মেডিকেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মাঝে হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বাংলানিউজকে বলেন, এখনো হাতিগুলো ওই গ্রামে অবস্থান করছে। আমরা বিজিবির মাধ্যমে ভারতে যোগাযোগ করেছি, ২০২০ সালের একটি প্রটোকল অন এলিমেন্ট কনভার্জেসন টিটি রয়েছে। সে হিসেবে হাতিগুলোকে ভারতে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। অন্য গ্রামবাসীদের নিরাপত্তায় ওই গ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।