এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও পেশাদারিত্বের কাঠামোতে আনা যায়নি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল)। ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলে যায় নিয়মিত, টাইটেল স্পন্সর ঠিক থাকে না, টিভি সত্ত্বের আয়ও বিভিন্ন দেশের টুর্নামেন্টগুলোর চেয়ে অনেক কম।ফ্র্যাঞ্চাইজিদের লভ্যাংশ দেওয়া তাই বেশ দূরের বাস্তবতা।
বিপিএলের পেশাদার ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মধ্যে অন্যতম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। টুর্নামেন্টের চারবারের চ্যাম্পিয়নও তারা। এবার ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক নাফিসা কামাল সরব হয়েছেন টুর্নামেন্টের লভ্যাংশের জন্য। এমনকি সেটি না পেলে ভবিষ্যতে টুর্নামেন্ট থেকে সরে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
নাফিসা কামাল বলেন, ‘আমরা স্পন্সরদের কাছ থেকে সাড়া পাই। কারণ আমরা পেশাদারভাবে কাজ করি। আমাদের দলে বিনিয়োগ করে স্পন্সর সেই মূলটা পাবে বা পায়, প্রতিদিন পাচ্ছে। আমাদের দল কিন্তু আমাদের পকেট থেকে হচ্ছে না, পুরো স্পন্সর-বেজড। সামনে যদি স্পন্সর না পাই, তাহলে বিপিএল করব না। কারণ পকেট থেকে বিপিএল করার তো মানেই হয় না। ’
বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের খরচ করা অর্থ সাধারণত উঠে আসে না। দেশের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ‘ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা’ থেকে বিনোয়োগ করেন বলে শোনা যায়। তবে সেটি মানতে নারাজ নাফিসা। তিনি বলছেন তাদের আয় ও ব্যয়ের হিসাব সমান।
নাফিসা বলেন, ‘শুধু ভালোবাসা থেকে এটা সম্ভবই নয়। এটা আপনারা সবসময় বলেন যে, আউট অব লাভ আমরা করছি। ভালেরাবাসার জায়গা থেকে আমরা করছি কাজটুকু… অনেক বেশি পরিশ্রম করছি, চেষ্টা করছি। যেটা বাকি দলগুলি করছে না। কিন্তু স্পন্সর তো আমাদেরকে পেতে হয়, আর্থিক দিক ঠিক রাখতে হয়। আমাদের টাকাটা তো আনতে হবে। নিজেদের পকেট থেকে তো পুরো বিপিএল চালাতে পারব না। এটা খুব মিথ্যা হবে যদি আমি বলি যে, আমাদের পকেট থেকে পুরো বিপিএল চালাচ্ছি। এটা সম্ভবই নয়। ’
‘বিপিএল শেষ হওয়ার পর যখন হিসাব করি, স্পন্সরের কাছ থেকে যে টাকাটা আসে আর আমি যে খরচটা করি, খুব ভালো হয় যদি দুটি মিলে যায়, সমান সমান যদি হয়। ব্যালেন্স ইজ ইকুয়াল। মাঝে-মধ্যে আমরা একটু বেশি দিই, কিন্তু অতটা বেশিও নয়। ’
কেন স্পন্সররা কুমিল্লাকে টাকা দিচ্ছেন? এই কারণও ব্যাখ্যা করেছেন নাফিসা। বিনিয়োগকারীদের অর্থের বিনিময় ফিরে পাওয়ার কথাও বলছেন তিনি।
‘আমাদের দলটা কিন্তু অনেক বেশি গোছানো ও পেশাদার। স্পন্সরদের সঙ্গে আমরা কাজ করি… আজকে আমি তিনটা স্পন্সরের সঙ্গে মিটিং করে আসলাম। আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজি চালাই… ইটস আ মার্কেটিং টুল, একটা ব্র্যান্ডিং… ওদের টাকাটা কীভাবে এখানে বিনিয়োগ হবে এবং আমরা কীভাবে ওদের রিটার্ন দেব। ’
‘আমাদের দলে আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারাইন, মঈন আলিরা প্রতি বছর আসছে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শীর্ষ তারকারা আসছে, আমরা সেভাবেই স্পন্সরদের কাছে বিক্রি করি। আমাদের জার্সির ওপর তাদের লোগো বসে… এই যে ওরিয়ন গ্রুপ, ওরা কিন্তু এমন নয় যে আজকে আছে, কালকে নেই, ওরা সবসময়ই আমাদের সঙ্গে আছে। কারণ ওই রিটার্নটা পাচ্ছে। ’
‘৫৪টা দেশে বিপিএল দেখানো হয়। সব দেশে ওই স্পন্সরের মিডিয়া কাভারেজ হয়। আমাদের একটা ফ্র্যাঞ্চাইজিও বিপিএলে এভাবে কাজ করে না। এমনকি বিসিবিও স্পন্সর পায় না। আমি বিসিবির কয়েকজনকে অ্যাপ্রোচ করেছি… আমি একটা স্পনসর পেয়েছি ভারত থেকে, তারা আমাদেরকে স্পন্সর করতে চায়, আমি বলেছি যদি আমাদেরটা সফল হয়, তাহলে তা বিসিবিকেও পাস অন করতে পারব। ’
তবে নাফিসা কামালের দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতার ফারাক আছে বলেও মনে করেন তিনি।
সুজন বলেন, ‘দল মালিকরা আমাদের সঙ্গে বসলে আমরা যখন পুরো বিষয়টি বোঝাব, আমি নিশ্চিত তাঁরাও বুঝবেন যে এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভব নয়। পিএসএলের উদাহরণ দেওয়া হয় এখন। ওখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি কত জানেন? স্পর্শকাতর তথ্য বলে দিতে পারছি না। এটুকুই শুধু বলি, বিস্তর ফারাক। এখন আয় শেয়ার করতে গেলে মডেল বদলাতে হবে। পিএসএলের ফর্মুলায় গেলে যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি হবে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা নিতে গেলে বিপিএলটা আর টেকসই হবে না। ’