রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ২০২৩ সালের জন্য বছর সমাপ্তি রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করেছে। এই ক্যালেন্ডার বছরে আমাদের পোশাক রপ্তানি ৪৭ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় এক দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি।অর্থাৎ বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এ বছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় দুই শতাংশ বেড়েছে, যার অর্থ হলো এই প্রবৃদ্ধির বেশিরভাগই এসেছে পোশাক রপ্তানি থেকে।
পোশাক রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধিতে কেবলমাত্র নিটওয়্যার রপ্তানি অবদান রেখেছে; নীটওয়্যার রপ্তানি সাত দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে ওভেন রপ্তানি শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ কমেছে।
২০২৩ সালের মাসভিত্তিক রপ্তানি পারফরম্যান্স দেখায় যে, বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে মোটামুটি প্রবৃদ্ধি সহকারে বছরটি ভালোভাবে শুরু হয়েছিল। মার্চ ও এপ্রিলে টানা কমার পর, মে থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে প্রবৃদ্ধি পুনরায় ইতিবাচক ধারাতে ফিরে আসে এবং তা বজায় থাকে। বছরের শেষ প্রান্তিকে রপ্তানি পারফরম্যান্স ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় নিচে নেমে আসে।
যদিও বছরটি ডিসেম্বরে দুই দশমিক ৩৫ শতাংশ কম সহকারে শেষ হয়েছে। এই একক মাসে রপ্তানি হয়েছিল চার দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পতন ঘটেছিল মূলত ২০২২ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অস্বাভাবিকভাবে বেশি রপ্তানির কারণে।
দেশভিত্তিক রপ্তানি পারফরম্যান্সের বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে।
বছরওয়ারি পোশাক রপ্তানি টার্নওভার হিসাব করলে ২০২৩ সাল পোশাক শিল্পের জন্য একটি ঐতিহাসিক বছর ছিল। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সংকট বিবেচনা করলে বাংলাদেশ মোটামুটি ভালো করেছে। তবে, বাংলাদেশের প্রধান বাজারগুলোর আমদানি কমেছে। কারণ, বেশিরভাগ উন্নত অর্থনীতি তাদের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লড়াই করছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন আর্থিক নীতি সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো ভোক্তাদের চাহিদার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
যেহেতু বিশ্বব্যাপী পোশাক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর ওঠানামা করে, তাই ধারণা করা হচ্ছে ২০২৪ একটি পরিবর্তনের বছর হবে। কারণ, ২০২৩ সালটি সারা বিশ্বজুড়েই পোশাক শিল্পের জন্য একটি দুর্বল বছর ছিল। ২০২৪ সালে ভোক্তাদের চাহিদা এবং ব্যয় পুনরায় বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইতিবাচক দিক হলো, সব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও শিল্পটি সাসটেইনেবিলিটি এর প্রতি তার প্রতিশ্রুতি এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে, যা ১ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে কার্যকর হয়েছে; সবুজ শিল্পায়নের দিকে শিল্পের রূপান্তরের অগ্রযাত্রা আরও জোরালোভাবে অব্যাহত থেকেছে। এছাড়া কার্বন নির্গমন কমাতে শিল্পের অগ্রগতিও উল্লেখযোগ্যভাবে দৃশ্যমান। বাজার, পণ্য ও ফাইবারের দিক থেকে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের প্রচেষ্টা শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আমরা আশা করি ২০২৪ সালে শিল্পে আরও কৌশলগত বিনিয়োগ হবে এবং আরও উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিল্পের দিকে একটি গুণগত পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আমি বিশ্বাস করি ২০২৪ সাল আমাদের জন্য সুবাতাস বয়ে নিয়ে আসবে। কারণ, আমরা শিল্পের একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করছি। আমাদের সামনে নতুন সুযোগ রয়েছে, যা কাজে লাগানোর উপায়গুলো শিল্প অন্বেষণ করছে এবং আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জও রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য সরকার, উন্নয়ন অংশীদার এবং অন্যান্য সব স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে অব্যাহত সহযোগিতা ও সমর্থন আমাদের প্রয়োজন।