ইলিয়াস কাঞ্চন, অতি পরিচিত নাম সঙ্গে সুপরিচিত মুখ। বয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে নতুন প্রজন্মের কাছে সমান জনপ্রিয় তিনি। কারও কাছে সেলুলডের নায়ক, কারও কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন রাজপথের নায়ক হয়ে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ‘বেদের মেয়ে জোছনা’খ্যাত চিত্রনায়ক ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্মদিন।
প্রতি বছর এই দিনে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় ভাসেন তিনি। কিন্তু এবার অনুরাগীদের মনে আনন্দ নেই, কারণ, ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাত মাস ধরে চিকিৎসাধীন ইলিয়াস কাঞ্চন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ছয় মাস ধরে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে একমাত্র মেয়ে ইসরাত জাহানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
গত ২৬ নভেম্বর তার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্য জানান নিসচার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ। তিনি জানান, ইলিয়াস কাঞ্চনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন। অসুস্থতার কারণে আগে কথায় যে জড়তা ছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে লিটন এরশাদ বলেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমারের বড় একটি অংশ এরই মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট অংশ রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে তিনি একটি মেডিসিন কোর্সে আছেন। কোর্স শেষ হলে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। রিপোর্ট দেখে পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা ঠিক করবেন চিকিৎসকরা।
তিনি কবে দেশে ফিরতে পারবেন-এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। নতুন পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন লিটন এরশাদ।
দীর্ঘ তিন মাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ৫ আগস্ট লন্ডনের উইলিংটন হাসপাতালে প্রফেসর ডিমিট্রিয়াসের নেতৃত্বে ইলিয়াস কাঞ্চনের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।
বলে রাখা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় আশুতিয়াপাড়া গ্রামে ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বাংলা চলচ্চিত্রে সোনালি যুগের এই অভিনেতা। তার বাবার নাম হাজী আব্দুল আলী, মাতার নাম সরুফা খাতুন। কৈশোর থেকেই অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিল ইলিয়াস কাঞ্চনের। যুক্ত হয়েছিলেন বেশ কিছু নাট্য সংগঠনের সঙ্গে।
নানা পথ পেরিয়ে কিংবদন্তি নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘বসুন্ধরা’ সিনেমা দিয়ে ১৯৭৭ সালে চলচ্চিত্রে ববিতার নায়ক হয়ে আবির্ভাব ঘটে ইলিয়াস কাঞ্চনের। এরপর চার দশকের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে রয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। উপহার দিয়েছেন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা। দেশীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক ব্যবসাসফল সিনেমার নায়কও তিনি।
ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ চলচ্চিত্রটি আজও কালজয়ী হয়ে আছে। রূপালি পর্দায় রোমান্টিক নায়ক হিসেবে অভিষেক হলেও অ্যাকশন, কমেডি কিংবা পারিবারিক সব চরিত্রেই নিজেকে সমানভাবে মানিয়ে নিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি।
রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসিমদের মতো নায়কদের সময়ে নিজেকে অভিনয়ের মুন্সিয়ানায় দেখিয়ে হয়ে ওঠেন দর্শকদের প্রিয় নায়ক। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাড়ে ৩৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতিও ছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্রের এক সময়ের এই দাপুটে নায়ক ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। প্রথম স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর পর তিনি নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন গড়ে তোলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই সেলুলয়েড থেকে রাজপথের নায়কে পরিণত হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। আর সমাজসেবায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেন।