নিজের পদত্যাগ নিয়ে চলমান গুঞ্জনকে সরাসরি নাকচ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, পদত্যাগ করলে তো আর এখানে বসে কথা বলতাম না।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি করার প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিকরা জানতে চান, গতকাল পদত্যাগ নিয়ে যে গুঞ্জন ছিল, সেটি কতটা সত্য।
জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পদত্যাগ করলে তো আর এখানে বসতাম না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আগমন ঘিরে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে এক বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন ও এতে পুড়ে তার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।এ ছাড়া খুলনায় এক এনসিপি নেতাকে গুলির ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। বিস্তারিত তথ্য জেনে পরবর্তীতে জানানো হবে। ময়মনসিংহে পোশাকশ্রমিককে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর অগ্রগতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন এবং থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অবৈধ ও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অভিযান আরও জোরদার ও গতিশীল করতে এবং সন্ত্রাসী তৎপরতা দমনের লক্ষ্যে গত ১৩ ডিসেম্বর অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই অপারেশনের মাধ্যমে গত ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি জানান, অভিযানে ৫৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৩৭ রাউন্ড গুলি, ১৩৭ রাউন্ড কার্তুজ, ৬২টি দেশীয় অস্ত্র, গ্রেনেড, মর্টারের গোলা, গান পাউডার, আতশবাজি ও বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় মামলা ও ওয়ারেন্টভিত্তিক গ্রেপ্তারসহ মোট ১৩ হাজার ৫০৫ জনকে আটক করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর অংশ হিসেবে সারা দেশে দুই হাজার চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বড়দিন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো ধরনের আতশবাজি করা যাবে না এবং রাস্তা অবরোধ বা ব্লকেড দিয়ে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না।
তিনি বলেন, প্রতিটি গির্জায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। গুলশান ও বনানীসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। এ সময় রাজধানীতে ট্রাফিক চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি নগরজুড়ে টহল ও তল্লাশি কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপদেষ্টা পরিষদ সভা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এর মধ্যে রয়েছে অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর মাধ্যমে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অভিযান, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার, গুরুত্বপূর্ণ কেপিআই স্থাপনার নিরাপত্তায় বিশেষায়িত বাহিনী প্রস্তুত রাখা, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বৃদ্ধি, পুলিশ সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়মিত মনিটরিং এবং সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ।