অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের ওপর আরও বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, বিশ্বের অনেক দেশ একে অন্যের দেখাদেখিতে সহায়তা কমিয়ে আনছে।যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে অবস্থান নিয়েছে, তা পরিস্থিতি কঠিন করে তুলতে পারে। আশা করি রোহিঙ্গাদের জন্য তারা অর্থ সহায়তা বন্ধ করবে না।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘দ্যা রোহিঙ্গা ইন বাংলাদেশ: ইন সার্চ অব এ সাসটেইনেবল ফিউচার’- শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহায়তা কমিয়ে আনছে জানিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা কমিয়ে আনছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের চাহিদা সরবরাহ অব্যাহত রাখা। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন। এ বিষয়ে আমি প্রত্যাবাসনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপে জোর দিতে চাই।
তিনি বলেন, কারণ, প্রথমে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে গিয়ে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে পারে যে আমরা সংকট সমাধানের পথে রয়েছি। এরপর হয়তো তারা আর রোহিঙ্গাদের নিলো না। ফলে পাইলট প্রকল্পে স্বল্পভাবে যাওয়া শুরু করলো, তবে প্রত্যাবাসনের সম্পূর্ণ রোডম্যাপ থাকবে হবে।
আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ একিভূত করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি হয়তো এ মুহূর্তে আমাদের সীমানার মধ্যে রয়েছে। তবে এ বিষয়টিতে এখনই মনোযোগ না দিলে এটি শুধু আর বাংলাদেশের সংকট থাকবে না।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের আন্তরিকতা প্রশ্নে সমালোচনা করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, চীন শুরু থেকে সংকট সমাধানে তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে আসছে। এটি তাদের তাত্ত্বিক অবস্থান। তবে বাস্তবিক অর্থে খুব বেশি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মিয়ানমারে চীনের গভীর স্বার্থ রয়েছে। সম্প্রতি চীন সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে তারা সংকট সমাধানে চেষ্টা করবেন।
উপদেষ্টা বলেন, এখন রাখাইন অঞ্চল আরাকান আর্মির দখলে। চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সব অংশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ চীনকে আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করেছে। একটি শান্তিপূর্ণ মিয়ানমার যেমন বাংলাদেশের প্রয়োজন, তেমনি চীনেরও প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একটিই সমাধান, সেটি হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে প্রত্যাবাসনটি হতে হবে তারা যেখান থেকে বিতারিত হয়েছে, সে স্থানে অধিকার ও নিরাপত্তাসহ। অন্য স্থানে তাদের পুনর্বাসন করলে হবে না। আর এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রয়োজন রয়েছে। তাদের নিশ্চিত করতে হবে রোহিঙ্গাদের ওপর যাতে একই ধরনের নৃশংসতা আর কখনো না হয়।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ইতিহাস দেখলে দেখবেন যে গণহত্যার মতো অপরাধ কখনই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়নি। সব সময় একটি সংঘাতের মধ্য দিয়ে এর সমাধান এসেছে। রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে বলেছি, এর সমাধান কখনই শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মধ্য দিয়ে হবে না।
বর্তমানে মিয়ানমারে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি চলছে তা হয়তো রোহিঙ্গাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি হয়তো সংকট সমাধানের একটি সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে পারবে। তবে এটি নিশ্চিত নয়। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ শেষ হলে দেশটি আগের অবস্থায় ফেরত যেতে পারবে না। ফলে সেখানে একটি পরিবর্তন আসবে, যোগ করেন তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ানের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, আসিয়ানের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আসিয়ান সংগঠনের আইন অনুযায়ী, এক দেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে কিছু বিষয় রয়েছে যা আর অভ্যন্তরীণ থাকে না, যেমন- রোহিঙ্গা সংকট। এটি বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকেও আক্রান্ত করেছে। আসিয়ান মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। রোহিঙ্গা নিয়ে অনেক দেশ কথা বলছে না, তবে কিছু দেশ রয়েছে তারা জোরালোভাবে কথা বলছে।