ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টায় পৌঁছালেই ক্যালেন্ডার থেকে হারিয়ে যাবে আরেকটি বছর, ২০২৪ সাল। শুরু হবে নতুন বছর, ২০২৫।ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) র্যাব সদর দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, নববর্ষবরণকে ঘিরে র্যাব ১৫টি পদক্ষেপ নিয়েছে।
র্যাবের গৃহীত পদক্ষেপ হলো—
১. গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে দায়িত্বপূর্ণ এলাকার উল্লেখযোগ্য ভেন্যুসমূহ ও তার পাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি এবং নিরাপত্তা টহল বৃদ্ধি করেছে র্যাব। আগামী বুধবার (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে সারা দেশব্যাপী পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।
২. ইংরেজি নববর্ষবরণে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সমগ্র দেশে র্যাবের গোয়েন্দা ও আভিযানিক দল প্রস্তুত রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর রাতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে র্যাব। র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সাইবার নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত অব্যাহত রেখেছে।
৩. ঢাকা মহানগরের গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডি, মিরপুরসহ অন্যান্য এলাকায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, অভিজাত হোটেল ও ক্লাব/বার অধ্যুষিত এলাকায় আগে থেকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে র্যাব। পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা হতে ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশের সব বার ও মদের দোকানসমূহ বন্ধ রাখার ব্যাপারে সরকার প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে র্যাব কাজ করছে। এছাড়া কক্সবাজার ও কুয়াকাটাসহ সব পর্যটন এলাকায় লোক সমাগম নিয়ন্ত্রণ করা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে র্যাব।
৪. পটকা, আতশবাজিসহ আগুন দ্বারা পরিচালিত ফানুস ওড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। আতশবাজি বা পটকা ফুটানো বা ফানুস ওড়ানো বন্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে জনবহুল স্থানে, খোলা জায়গা বা বাসার ছাদে ও ফ্লাইওভারে কনসার্ট ও নাচ-গানের আয়োজন থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হলো।
৫. গৃহীত নিরাপত্তা কার্যক্রমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বিভিন্ন যানবাহন ও পথযাত্রীদের তল্লাশিপূর্বক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। র্যাবের টহল/চেকপোস্ট জোরদার করতে ডগ স্কোয়াড দিয়েও তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
৬. ভিভিআইপি/ভিআইপি, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টে কর্মরত ও বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের এলাকায় গুরুত্বের সঙ্গে নিরাপত্তা বিধান জোরদার করা হয়েছে।
৭. চক্রান্তকারী/উস্কানিদাতা/উগ্রবাদী সংগঠন/নিষিদ্ধ সংগঠন এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিষয়ে আগাম তথ্য সংগ্রহপূর্বক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যে কোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব।
৮. ভার্চুয়াল জগতে যে কোনো ধরনের গুজব/মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে র্যাব। যারা সাইবার জগতে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দেওয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সংঘাতকে উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা করবে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
৯. বঙ্গভবন, রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনা, বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও কেপিআইয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
১০. যে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদকাসক্ততা প্রতিরোধকল্পে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং হচ্ছে।
১১. উচ্চস্বরে গাড়ির হর্ন বাজানো ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি বা মোটর সাইকেল চালানো থেকে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে বিরত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১২. কোনো নারী যেন ইভটিজিং অথবা সম্মানহানির শিকার না হন সে দিকে বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
১৩. যে কোনো ধরনের নাশকতামূলকসহ যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও নিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
১৪. র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড টিম ও ক্রাইম সিন ভ্যানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং কৌশলগত স্থানে থেকে সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তার বিধানে নিয়োজিত রয়েছে।
১৫. দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। এছাড়া ওই সময়ে যে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে জেলা/মেট্রোপলিট্রন এলাকা/থানা ভিত্তিক স্থানীয় র্যাবের সহযোগিতা পেতে টহল ইনচার্জ অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত র্যাব ব্যাটালিয়ন অধিনায়নকে অবহিতকরণসহ র্যাবকে (র্যাব কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বর ০১৭৭৭৭২০০২৯) জানানোর জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হলো।