সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪ এর কয়েকটি ধারায় শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ কমানোর উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি মনে করে, তরুণ শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ প্রণীত হওয়ার পর তার কার্যকর বাস্তবায়ন দূরে থাক, সড়কে বিশৃঙ্খলা, অনাচার ও নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে বলে মনে করে।জনস্বার্থ বিবর্জিত প্রস্তাবিত সংশোধনীর ফলে আইনটি তার উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষের হাতে সড়ক ব্যবস্থাপনার জিম্মিদশা আরও বাড়বে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।
বার্তায় টিআইবি বলছে, সড়ক পরিবহন আইন ২০২৪- এ যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক করা, সুপারভাইজার সংযুক্ত করা এবং গণপরিবহনে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন অথবা নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় সংক্রান্ত ধারা লঙ্ঘনের দণ্ড আলাদাভাবে করা হয়েছে।
এ তিনটি সংশোধনীর সঙ্গে গবেষণালব্ধ সুপারিশের সামঞ্জস্য থাকায় সতর্ক সাধুবাদ জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা এনে তা জনগণের জন্য নিরাপদ করে তুলতে যেখানে জরিমানা ও শাস্তির বিধান যৌক্তিকভাবে বাড়ানো প্রয়োজন, সেখানে সংশোধনীর মাধ্যমে শাস্তি কমানো হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়বে এবং জনগণের জন্য সড়ক আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠবে। একইসঙ্গে তা চালক-শ্রমিকদের আইন না মানার প্রবণতার পাশাপাশি সড়কে অনিয়মকেও উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, সড়ক নিরাপদ করে তুলতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও অবস্থাদৃষ্টে সরকারের অবস্থান ঠিক তার উল্টো দিকে বলে প্রতীয়মান হয়। এমন সংশোধন সড়কে অনিয়ম-দুর্নীতি, নৈরাজ্য বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে, সড়ক-মহাসড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত মর্মান্তিক মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ করবে।
টিআইবির সাম্প্রতিক গবেষণায় পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষের হাতে সড়ক ব্যবস্থাপনার জিম্মিদশার প্রকটতার বিষয়টি উঠে আসে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সড়ক আইন সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তি ও জরিমানা কমানোর বিষয়টি এ জিম্মিদশার সঙ্গে দৃশ্যত সম্পর্কিত। আইনে সংশোধন এনে শাস্তি কমানোর পেছনে সরকারের ওপর রাজনৈতিক মদদপুষ্ট মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের যে প্রভাব রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এই সংশোধনী সংসদে গৃহীত হলে জনগণের স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত হবে। এ আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সংশোধন প্রক্রিয়ার কোনো ধাপেই প্রস্তাবিত সংশোধনীর খসড়া খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য উন্মুক্ত না করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
টিআইবি মনে করে, সড়কে জনগণের চাহিদা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরিপ্রেক্ষিতে যাদের শৃঙ্খলায় আনতে আইনটি তৈরি করা হয়েছে, তাদের চাপে এবং স্বার্থে আইনের সংশোধন করা হলে আইনের সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। একইসঙ্গে যে উদ্দেশ্যে আইনটি করা হয়েছিল, তা থেকে সরে দাঁড়ানো হবে।
খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করার আগে বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে টিআইবি।