অর্থায়ন ও বাজারে প্রবেশাধিকারে বাধার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের প্রসার হচ্ছে না। এ জন্য ব্যাংক খাতকে যেমন এসএমই খাতের জন্য মমতা দেখাতে হবে, তেমনি বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা বাড়াতে হবে।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এসএমই খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সেমিনারে উদ্যোক্তা নেতা, গবেষক ও ব্যাংকাররা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বড় এসএমই ছোট করতে করতে অতি ছোটতে পরিণত হয়েছে। এখন এসএমইর সম্ভাবনার কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন হচ্ছে না। এ খাতে সমস্যা অর্থায়ন, ডকুমেন্টেশনও বাজারে প্রবেশাধিকারে।
তিনি বলেন, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অথায়নের কথা উপর থেকে বলা হলেও নিচে গিয়ে কাজের কাজটি হচ্ছে না। ব্যাংকের উপর থেকে শাখাপর্যায়ে নির্দিষ্ট করে নির্দেশনা দিলেও কাজ হচ্ছে না। এর জন্য দায়ী মনোভঙ্গি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, জাপানের মতো দেশে একটি পণ্যের ছোট্ট অংশগুলো এসএমই খাত থেকে তৈরি করে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে বড় শিল্পের অধীনে এসএমই খাত শিল্প বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। আর আমাদের দেশে ঝালমুড়ি থেকে সবকিছুই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো করতে চায়। এতে এসএমই বিকশিত হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
এক শতাংশ সোর্সিং ট্যাক্স এসএমই খাতের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, মত দেন তিনি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার বলেন, সিএসএমই বা এসএমইর বিকাশে বিশেষ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। সরকার এসএমই খাতে বিশেষ সুবিধা দেয়ও। কিন্তু সে সুযোগ নিয়ে নেয় এ খাতের মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজগুলো। ফলে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থায় ছোট্ট ও কুঠির শিল্প যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, ছোট ও কুটির শিল্পগুলো করোনা মহামারির ফলে ক্ষতির শিকার হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তারা সরকারের দেওয়া প্রণোদনা পায়নি বা পাচ্ছে না। এসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প থেকে মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজগুলোকে আলাদা করতে হবে, যাতে এসব শিল্পকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগের পুরোটা কাজে লাগানো যায়।
তিনি বলেন, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের ডকুমেন্টেশন চায় ব্যাংকগুলো, ছোট ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না।
এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সামনে বাজার প্রবেশাধিকার বড় বাধা বলে মনে করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের কষ্ট-ক্লিষ্ট মুনাফা মধ্যস্বত্বভোগীরা ভোগ করে। তাদের কাছে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা একপ্রকার জিম্মি থাকে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের পুঁজি কম থাকে। তারা পণ্য বাজারে বিক্রি করে টাকা আসা পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ রাখে। এতে খরচ বেড়ে যায়। এ কারণে মার্কেটে তারা সুবিধা করতে পারে না।
তিনি বলেন, উৎপাদনকারীরা বিদেশের বাজারের দিকে বেশি নজর দেন। অথচ দেশে তিন কোটি মধ্যবিত্ত মানুষের বাজার, যে বাজার অনেকাংশ বিদেশি পণ্য দখল করে আছে। এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা দেশের এ বিশাল ভোক্তাদের সামনে রেখে পণ্য তৈরি করতে পারে, চাহিদামতো মানসম্পন্ন পণ্য তৈরিতে মনোযোগ দিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
জেডএ/আরএইচ