হীরা বা ডায়মন্ডের অলংকার ক্রয়ে প্রতারণা এড়াতে সারাদেশের ক্রেতাদের অধিক সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজুসের সদস্য প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড হাউসের নাম ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের একাধিক স্থানে একটি অসাধু চক্র নিত্যনতুন শো রুম খুলেছে।এসব শো রুমের নাম দেওয়া হচ্ছে ডায়মন্ড হাউস, যা প্রকৃত অর্থে প্রতারণা। বাজুস সদস্য প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড হাউসের শো রুম শুধু রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে রয়েছে। কিন্তু প্রতারক চক্রের পরিচালিত ভুঁইফোড় ডায়মন্ড হাউস নামের শো রুম রাজধানীর পিংক সিটি, ধানমন্ডির মেট্রো শপিংমল, শান্তিনগরের টুইন টাওয়ার, ফরচুন শপিংমল, উত্তরার রাজলক্ষী শপিং কমপ্লেক্স ও চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি স্থানে রয়েছে।
বাজুস জানিয়েছে, প্রতারক চক্রের পরিচালিত ভুঁইফোড় ডায়মন্ড হাউস নামের শো রুম থেকে ক্রেতারা অলংকার কিনে প্রতারিত হলে তার দায় বাজুস নেবে না। ভুঁইফোড় ডায়মন্ড হাউস নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে বাজুস।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বাজুস কার্যালয়ে সংগঠনের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং আয়োজিত ‘অংলকার ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ক্রেতাদের এ বিষয়ে অধিক সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বাজুসের সহসভাপতি এম এ হান্নান আজাদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, সহসভাপতি মো. রিপনুল হাসান, মাসুদুর রহমান ও সমিত ঘোষ অপু, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের ভাইস-চেয়ারম্যান এনামুল হক ভূইঁয়া লিটন, সদস্য সচিব বাবলু দত্ত প্রমুখ।
জুয়েলারি শিল্পের ঐতিহ্য, ব্যবসায়িক সুনাম ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্বিক দিক বিবেচনা করে গত ২৪ জুন ‘অলংকার ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা-২০২৩’ প্রণয়ন করেছে বাজুস। এতে হীরা বা ডায়মন্ডের অলংকার ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে বাজুস বলেছে, ১ থেকে ৫০ সেন্টের মধ্যে সব ডায়মন্ডের গহনার ক্ষেত্রে কালার ও ক্ল্যারিটি সর্বনিম্ন মানদণ্ড হবে (IJ/আইজে) ও (SI-2/এসআই-টু)। ৫০ সেন্টের ওপরে সব ডায়মন্ডের গহনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। ডায়মন্ডের গহনায় স্বর্ণের সর্বনিম্ন মানদণ্ড ১৮ ক্যারেট। অর্থাৎ ডায়মন্ডের গহনায় ১৮ ক্যারেটের নিচের মানের স্বর্ণ ব্যবহার করা যাবে না। ডায়মন্ডের অলংকার বিক্রয়ের সময় বাধ্যতামূলক ক্যাশমেমোতে গুণগতমান নির্দেশক ফোর-সি (Color, Clarity, Cut, Carat) উল্লেখ করতে হবে। ডায়মন্ডের অলংকার এক্সচেঞ্জ বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ও পারচেজ বা ক্রেতার নিকট থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ বাদ দিতে হবে।
ক্রেতাসাধারণকে আকৃষ্ট করার জন্য ডায়মন্ড অলংকার বিক্রয়ের সময় কোনো প্রকার প্রলোভনমূলক উপহার সামগ্রী বা একটা কিনলে একটা ফ্রি এই ধরনের অফার দেওয়া যাবে না। এই নির্দেশের ব্যত্যয় ঘটলে ওই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে আসল ডায়মন্ডের নামে নকল ডায়মন্ড (মেসোনাইট, সিভিডি, ল্যাব মেইড, ল্যাব বর্ন ইত্যাদি) বিক্রি করলে ওই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডায়মন্ডের গহনার মান নিশ্চিতকরণে মানসম্পন্ন ডায়মন্ড ল্যাবের সনদ থাকতে হবে। ডায়মন্ড অলংকার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া যাবে। যদি কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ম অমান্য করে তাহলে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাসহ বিধি মোতাবেক সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি আইন ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বাজুস বলেছে, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত ও আইনি ঝামেলা এড়াতে নিজ দায়িত্বে বিএসটিআই থেকে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ওজন পরিমাপক যন্ত্র পরীক্ষা করে স্টিকার ও সার্টিফিকেট নিতে হবে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি প্রতিরোধে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে মূল্যবান ধাতু এবং মূল্যবান পাথরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আখ্যায়িত করেছে। এজন্য কোনো গ্রাহক মূল্যবান ধাতু ও পাথর ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ১০ লাখ টাকা বা তদুর্ধ্ব পরিমাণ নগদ টাকার লেনদেন করে তাহলে বিএফআইইউ বরাবর গ্রাহকের লেনদেন সম্পর্কিত রিপোর্ট দিতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ তথ্যাদি কমপক্ষে পাঁচ বছর সংরক্ষণ করতে হবে। এ বিষয়ে বিএফআইইউয়ের ওয়েবসাইটে (https://www.bfiu.org.bd) বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
বাজুসের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বাজুসের নিয়মানুযায়ী সদস্যভুক্ত সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক বাজুসের স্টিকার ও হালনাগাদ সনদপত্র শো রুমের ভেতরে দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। বাজুসের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানে স্টিকার, সনদপত্র ও আইডি কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল রেখে সাদৃশ্যপূর্ণ নাম বা নামের পূর্বে-পরে নিউ, দি বা অন্য কিছু বা বিদেশি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের নাম সংযুক্ত করে নতুন কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা যাবে না। অলংকার ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা-২০২৩ অমান্যকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে অবহিত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
এইচএ/