রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই চোখে পড়বে রংবেরঙের সব মিষ্টান্নে সাজিয়ে রাখা টেবিল। বেশির ভাগই ‘ফ্রেঞ্চ ডেজার্ট’, অর্থাৎ ফরাসি মিষ্টান্ন। পাশাপাশি আছে বেশ কিছু ‘স্কটিশ ডেজার্ট’ও। এত কিছুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়বে প্রায় ২ ফুট লম্বা এক চকলেটের ঝরনা। বুঝতেই পারছেন, পানির বদলে সেখানে ঝরছে চকলেট। দেখতে বেশ লোভনীয়। একের পর এক সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন স্বাদের কেক, পেস্ট্রি, মাফিন, মাকারন ছাড়াও আছে সুস্বাদু সব মিষ্টান্ন। তবে শুধু এসবই নয়, নানান স্বাদের ফরাসি খাবার উপভোগ করতে হলে যেতে হবে গুলশান ২–এর ক্রাউন প্লাজার ২৪ তলায়। সেখানে চলছে ১০ দিনব্যাপী ফরাসি খাবারের উৎসব, ফেস্টিভ্যাল দে লা গাস্ট্রোনমি।
১৫ জুন, সন্ধ্যা। ভেতরে ঢুকতেই আমন্ত্রণ জানালেন আয়োজনের বিপণন ব্যবস্থাপক সাকেরিনা খালেদ। বলছিলেন, ‘খাবারের ধরন কমবেশি সব রেস্তোরাঁয় একই রকম। তবে আমরা আলাদা আপ্যায়নের ক্ষেত্রে।’
উৎসবে বিভিন্ন খাবারের ধরন বুঝে আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে। যে যাঁর সুবিধামতো বেছে নিচ্ছেন পছন্দসই পদটি। চিংড়ির বেশ কয়েকটি পদ আছে। বরফের ওপর রাখা ঠান্ডা চিংড়িগুলো দেখতে অদ্ভুত লাগলেও খেতে বেশ সুস্বাদু। আলাদা করে রাখা বিশাল আকারের কোরাল মাছের সঙ্গে খেতে পারবেন মজাদার সব ফ্রেঞ্চ সস।
চিজপ্রেমীদের কাছে উৎসবটি বেশ লাগবে। কেননা খাবারে বিদেশ থেকে আনা নানা জাতের পনির ব্যবহার করা হয়েছে। এসব পনির এসেছে ইউরোপ থেকে। জানালেন সাকেরিনা খালেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, খাবার তৈরির উপকরণ যত ভালো হবে, খাবারের মান ও স্বাদ তত ভালো হবে।’
উৎসবের খাবারের বেশির ভাগ উপকরণই একেবারে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন খামার থেকেও আনা হয়েছে তাজা সব উপকরণ।
উৎসবের প্রধান শেফ আলেকসান্দার রেইলি বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঘুরঘুর করছিলেন। সবার সঙ্গে আগ্রহ নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। জানতে চাচ্ছিলেন, উৎসব কেমন লাগছে, খাবার কেমন হয়েছে ইত্যাদি। স্কটল্যান্ডের এই বাসিন্দা নিজ দেশ ছেড়ে পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশে। প্রায় ১১ মাস ধরে আছেন এখানে। ঐতিহ্যবাহী ফরাসি খাবার রান্নায় বেশ দক্ষ তিনি। জানালেন, উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাবার হচ্ছে ভিল। এটি গরুর মাংস দিয়ে তৈরি একটি ফরাসি খাবার। রেইলি বলেন, ‘আমি সবাইকে এই উৎসবে আমন্ত্রণ জানাতে চাই।’
বাংলাদেশে কেমন লাগছে জানতে চাইলে বলেন, ‘এখানে আসলে ভালো না লেগে উপায় নেই। এখানকার সংস্কৃতি, মানুষ—সবই ভালো লাগছে। সবাই খুব বন্ধুসুলভ এবং অতিথিপরায়ণ। খাবারও খুব ভালো। আমি বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে চাই।’
এক কোনায় রাখা হয়েছে বেশ কয়েক পদের ভারতীয় খাবার, যা রান্নাও করেছেন একজন ভারতীয় শেফ। এ ছাড়া দুজন বাংলাদেশি শেফ আছেন। উৎসবের দেশি পদগুলো রান্না করেছেন তাঁরা। ৭ হাজার ৪৯৯ টাকায় এই ফরাসি বুফে উপভোগ করতে পারবেন যে কেউ। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের কার্ডে একটি বুফের সঙ্গে আরেকটি বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে। উৎসব চলবে ২৪ জুন পর্যন্ত।