তেলের উৎপাদন আবার কমাতে চায় ওপেক, বাড়তে পারে দাম

তেলের উৎপাদন আবার কমাতে চায় ওপেক, বাড়তে পারে দাম

ওপেক ও এর সহযোগী দেশগুলো আবারও তেলের উৎপাদন হ্রাস করার বিষয়ে আলোচনা করছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারের ঘরে নেমে আসায় এবং বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে তেল উৎপাদনকারীরা জোগান কমিয়ে দাম বাড়াতে চায়।

তেল উৎপাদনকারীদের জোট ওপেকের সদস্য ও এর সহযোগী দেশগুলো বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের ৪০ শতাংশ জোগান দেয়। ফলে তারা কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে বাজারে তার প্রভাব পড়ে।

আগামীকাল রোববার ভিয়েনায় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকের আগে তেল উৎপাদন হ্রাসের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ওপেকের অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে জানতে পেরেছে রয়টার্স। তবে রোববারের বৈঠকের আগে আজ শনিবারও ওপেক এবং সহযোগী দেশগুলোর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

ওপেক কয়েক বছর ধরেই দফায় দফায় তেলের উৎপাদন হ্রাস করেছে। এর আগে শেষবার গত এপ্রিল মাসে বিস্ময়করভাবে দিনে ২০ লাখ ব্যারেল বাধ্যতামূলক ও ১৬ লাখ ব্যারেল তেল স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো। অর্থাৎ ২০ লাখ ব্যারেল পাশাপাশি সহযোগী দেশগুলো চাইলে দিনে আরও ১৬ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাতে পারে। এরপর তারা আবার এই উৎপাদন হ্রাসের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।

নতুন এই উৎপাদন হ্রাসের বিষয়টি অনুমোদিত হলে সব মিলিয়ে দৈনিক মোট উৎপাদন হ্রাসের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল, যা বৈশ্বিক চাহিদার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও এর আগে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিল, নতুন করে উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত হবে, তেমনটা তারা আশা করছে না।

এদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো কারসাজি করে তেলের দাম বাড়াচ্ছে এবং জ্বালানির দাম বাড়িয়ে বিশ্ব অর্থনীতির মূলে কুঠারাঘাত করছে।
অন্যদিকে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর যুক্তি, কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর অবাধে নোট ছাপানোর কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে এবং সে কারণে তেল উৎপাদনকারীরা মুনাফা বজায় রাখতে দফায় দফায় তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বাধ্য হচ্ছে।

এদিকে ইরাকের তেলমন্ত্রী হায়ান আবদেল গানি ভিয়েনায় পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বৈশ্বিক তেলের বাজারের স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য বজায় রাখতে যা করা দরকার, তা করতে আমরা কসুর করব না।’

এপ্রিল মাসে হঠাৎ করে তেলের উৎপাদন হ্রাসের কারণে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯ ডলারের মতো বেড়ে যায়, কিন্তু এতে বিশ্ব অর্থনীতির চাহিদা ও পরিণামে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, সেই আশঙ্কায় তেলের দাম শিগগিরই কমে যায়। তেলের আন্তর্জাতিক বাজারের মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আজ ব্যারেলপ্রতি ৭৬ ডলার।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) আশা করছে, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগে বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা বাড়বে এবং তাতে তেলের দামও বাড়বে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক জে পি মর্গ্যানের বিশ্লেষকেরা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে দ্রুত তেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে, ওপেক ঠিক তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারেনি।

বিশ্লেষকেরা বলেন, তেলের চাহিদা দ্রুত হারেই বাড়ছে। কিন্তু বাজারে সরবরাহ অনেক বেশি এবং ওপেক সরবরাহ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় নিয়েছে। ওপেক বা অন্তত তার কয়েকটি সহযোগী সদস্যকে আরও বেশি পরিমাণ উৎপাদন কমাতে হতে পারে।

আরেক প্রতিষ্ঠান র‍্যাপিডান এনার্জি গ্রুপের বিশ্লেষকেরা বলেন, তেলের উৎপাদন হ্রাসের সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। তাঁরা মনে করেন, ২০০৮ সালের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চান না মন্ত্রীরা। সেবার বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলে ১৪০ ডলার থেকে কমে ৩৫ ডলারে নেমে আসে। এবার তাঁরা সেটা হতে দিতে চান না।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সাত বছর পর ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। মূলত এ কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়, ফলে তেলের দাম আবার কমতে শুরু করে।

তা সত্ত্বেও বিশ্বের বড় ৬টি জ্বালানি তেল কোম্পানি ২০২২ সালে সব মিলিয়ে মুনাফা করেছে ২১ হাজার ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার। এদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে সেবার। এই বিপুল মুনাফার কারণে তেল কোম্পানিগুলো সমালোচনার মুখেও পড়েছে। অনেক দেশে এই দাবি জোরদার হয়েছে যে এসব কোম্পানির অতিরিক্ত মুনাফার ওপর আরও বেশি কর, যা ‘উইন্ডফল ট্যাক্স’ হিসেবে পরিচিত, আরোপ করা হোক।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS