তামাকজাত দ্রব্যের সাথে মিষ্টিদ্রব্য, মশলা, সুগন্ধি, আসক্তিমূলক দ্রব্য, রং ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ধারা যোগ করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪ এর খসড়া তৈরি করেছে সরকার। কিন্তু প্রস্তাবিত ধারাটি অস্পষ্ট এবং যুক্তিসঙ্গত বা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে এ আইন বাস্তবায়ন হলে একদিকে রাজস্ব হারাবে সরকার, অন্যদিকে অবৈধ সিগারেটের বাজার বাড়বে।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রস্তাবিত ধারাটি প্রকারান্তরে সিগারেট, বিড়িসহ তামাকজাত দ্রব্যের বৈধ ব্যবসার ওপর নিষেধাজ্ঞার শামিল।
কারণ উল্লেখিত উপাদানগুলোর বেশির ভাগই তামাকজাত দ্রব্য ও সিগারেট তৈরিতে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রস্তাবিত ধারাটি মেধাস্বত্ত্ব অধিকারকেও খর্ব করে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে বৈধ উৎপাদন বন্ধ বা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে অবৈধ সিগারেটের বাজার আরও বাড়বে।যার বিরূপ প্রভাব পড়বে সরকারের রাজস্ব আয়ে। পাশাপাশি বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাদের মতে, ধারাটি অস্পষ্ট। এর ফলে বহুমুখী ব্যাখ্যা দ্বারা সংশ্লিষ্টজনদের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
এটি যুক্তিযুক্ত সুপারিশ নয় এবং কার্যকর করাও বাস্তবসম্মত নয়। তারা বলছেন, অংশীজনের মতামত ছাড়াই চূড়ান্ত করা হয়েছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের খসড়া, যা নিতান্তই অমূলক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের আইন বিদেশি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং এতে রপ্তানি আয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই আইন পাস হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে এই খাতের সংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক খুচরা বিক্রেতা ও প্রান্তিক কৃষকরা। আর বৈধ ব্যবসা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এই খাত থেকে সরকারের যে ১০ শতাংশ রাজস্ব আসে, সেটা সরাসরি হুমকির মুখে পড়বে।অন্যদিকে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরিস্থিতি আমাদের নেই।
গণঅভ্যুত্থানে পদচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সনে সংশোধিত) সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ডিসেম্বরে এ বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। এ সম্পর্কিত সরকারি গেজেট অনুসারে, এই কমিটি সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত বা পরামর্শ পর্যালোচনা করে আইন সংশোধন বিষয়ে সুপারিশ করার কথা ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও জুলাই মাসে উপদেষ্টা কমিটির দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইন সংশোধনের ফলে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা বিবেচনায় নেওয়ার কথা থাকলেও এনজিওদের চাপের মুখে পরবর্তীতে তা আর হয়নি। ফলে একদিকে রাজস্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে সরকার, অন্যদিকে অবৈধ বাজার বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিধান সাহা: কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট