News Headline :
সহিংস রাজনীতি প্রত্যাখ্যান, নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন ৪০ শতাংশ ভোটার

সহিংস রাজনীতি প্রত্যাখ্যান, নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন ৪০ শতাংশ ভোটার

বাংলাদেশের ভোটারদের কাছে নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রত্যাশা। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিকতম (নভেম্বর ২০২৫) জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ মানুষ আইন-শৃঙ্খলা ও জানমালের নিরাপত্তাকে আগামী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে দেখতে চান।

এ ছাড়া ৪৯ শতাংশ নাগরিক মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। একইসঙ্গে ৯২ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, সহিংসতায় জড়িত কোনো দল বা প্রার্থীকে তারা ভোট দেবেন না।

তবে ৩৩ শতাংশ ভোটার এখনও সিদ্ধান্তহীন, যাদের আস্থা অর্জন করাই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও যমুনা টেলিভিশনের যৌথ আয়োজনে এক নাগরিক সংলাপে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। 
সংলাপের শুরুতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অব পার্টি আমিনুল এহসান বলেন, নিরাপত্তাহীনতা শুধু জনজীবন নয়, ভোটার অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক আস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একপক্ষ বাড়তি সুবিধা পায়, অন্যরা বঞ্চিত হয়।এই কাঠামোগত বৈষম্য থেকেই সংঘাত ও সহিংসতার সূত্রপাত হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক সাইমী ওয়াদুদ বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সহিংসতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, রাজনৈতিক সংস্কার এবং দলগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন এখন জরুরি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, রাজনৈতিক অর্থনীতির পরিবর্তন ছাড়া সহিংসতার সংস্কৃতি বদলাবে না।

রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য সহজ করতে হবে। কালো টাকার মালিক ও অসৎ আমলাদের রাজনীতিতে প্রবেশ বন্ধ না করলে সহিংসতা বন্ধ হবে না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীন বলেন, রাজনীতিবিদদের উস্কানিমূলক বক্তব্য সরাসরি সহিংসতাকে উস্কে দেয়, অনলাইনে যেমন, অফলাইনেও তেমন। ভোটের প্রার্থীরা যদি একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার বন্ধ করে, সহিংসতা অনেকটা কমে আসবে। দলগুলোর নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক করা, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদে নিয়োগ ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা এবং গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা গেলে রাজনীতি সংঘাতমুক্ত হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা সব মানুষের চাওয়া। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় স্বার্থান্বেষী মহল সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে। হাদী হত্যার পর যা ঘটেছে, তা রাজনৈতিক নয়, এটি পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে না। বিরোধী দলকে সংসদের আসন সংখ্যার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে না।

জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান বলেন, রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পুলিশ ও প্রশাসন বেপরোয়া হয়ে ওঠে, এটি বন্ধ করতে হবে। সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে দলের কঠোর অবস্থান না থাকলে এবং দুর্নীতিকে লাল কার্ড না দেখালে সহিংসতা থামবে না। সকল ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও যমুনা টেলিভিশনের যৌথ আয়োজনে, এফসিডিও’র আর্থিক সহায়তায় ‘বি-স্পেস’ প্রজেক্টের আওতায়, সংঘাত ও সহিংসতা মুক্ত হোক রাজনীতি শীর্ষক নাগরিক সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS