৩০০ ফিটে সাজসাজ রব, উৎসবের আমেজে বিএনপি নেতা-কর্মীরা

৩০০ ফিটে সাজসাজ রব, উৎসবের আমেজে বিএনপি নেতা-কর্মীরা

দুপুর গড়াতেই রাজধানীর পূর্ব প্রান্তের ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসেওয়ের কুড়িল সংলগ্ন অংশে (৩০০ ফিট) ব্যাপক ভিড়। এখানে চলছে বিশাল সংবর্ধনা মঞ্চ তৈরির কাজ। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দেশে ফিরছেন। তাকে সংবর্ধনা দিতেই বানানো হচ্ছে এই মঞ্চ।

এই প্রস্তুতি ঘিরেই রাজধানীসহ সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। 

সাজ সাজ রবে মুখর ৩০০ ফিট এলাকায় জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের চোখেমুখে উৎসবের আমেজ। তারা বলছেন, দেশের রাজনীতিতে আগামী ২৫ ডিসেম্বর একটি ঐতিহাসিক তারিখ হয়ে থাকবে। সেদিন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দলের নেতাকে তারা বরণ করে নেবেন।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ৩০০ ফিট এলাকায় মঞ্চের নির্মাণকাজ তুঙ্গে। সকাল থেকেই শ্রমিক ও স্বেচ্ছাসেবকরা দিনরাত কাজ করছেন। লোহার কাঠামো বসছে, গোছানো হচ্ছে মাইকের তার। করা হচ্ছে আলোকসজ্জা ও ডেকোরেশনের কাজ।

বিশাল পর্দা ও ব্যানারও তৈরি হচ্ছে, যেখানে লেখা থাকবে ‘স্বাগতম তারেক রহমান’ ও ‘গণতন্ত্রের বিজয়’।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য বিএনপির গঠিত কমিটির সদস্যরা দিন-রাত তদারকি করে আয়োজনকে পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং মহানগরের শীর্ষ নেতারা ক্ষণে ক্ষণে এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন মঞ্চ নির্মাণসহ অন্যান্য প্রস্তুতির।

এদিকে, শুধু ৩০০ ফিট নয়, তারেক রহমানের আগমন ঘিরে দলের পতাকা ও পোস্টার দিয়ে পুরো শহর যেন সাজানো হয়েছে। প্রধান সড়ক, অলি-গলি, মোড়ে মোড়ে ঝুলছে ব্যানার-বিলবোর্ড, যেখানে শোভা পাচ্ছে ‘লিডার আসছে’, ‘হে বিজয়ী বীর, তোমাকে স্বাগত’ ইত্যাদি স্লোগান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাতে কয়েকদিন আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় আসা এক কর্মী বলেন, ‘এই দিনের জন্য আমরা বহু দিন অপেক্ষা করেছি। এখানেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস লেখা হবে। নেতা দেশে ফিরছেন, তাই এখানে আসার আনন্দ আর উত্তেজনা বোঝানো কঠিন।’

মঞ্চ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকরা কর্মীদের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মাইক বসানো হয়েছে, যাতে অনুষ্ঠান চলাকালীন ঘোষণা ও স্লোগান সহজে পৌঁছানো যায়।

বিএনপির সিনিয়র ‍যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের মহামিলনমেলা হবে। সেদিন এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিতির ক্ষেত্রে ৫০ লাখ বা তারও বেশি মানুষের সমাগম হবে বলে তারা আশা করছেন।

দলের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতিও পেয়েছে দলটি। সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে, যাতে অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।

সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আনতে বাস ও লঞ্চের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত বগি সংযোজনের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। জনদুর্ভোগ এড়াতে কর্মসূচি সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। এরপর তিনি সরাসরি ৩০০ ফিটের গণসংবর্ধনা মঞ্চে আসবেন এবং সেখানে ভাষণ দেবেন, এরপর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে নিজের মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন।

মঞ্চের সামনে আসা নেতা-কর্মীরা বলছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানে তারা ছুটে এসেছেন, যা তাদের রাজনৈতিক আবেগ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে; নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে এখন একটিই কথা—‘এ দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে’। ৩০০ ফিটে তৈরি এই বিশাল মঞ্চ হয়ে উঠবে সেই মুহূর্তের সাক্ষী, যেখানে শত শত নেতা-কর্মী ও সমর্থক একসঙ্গে স্লোগান তুলবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS