ফের কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা

ফের কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা

৬ দফা দাবিতে ফের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন।

সোমবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুরুল হক হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) এর মধ্যে দাবি আদায়ের জিও প্রকাশ না হলে আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনির্দিষ্টকালের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মবিরতিতে যাবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ওয়াসি উদ্দিন রানা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী, মুখ্য সংগঠক জিয়াউল হক কাবুল, আব্দুস সালাম প্রমুখ।

নেতারা জানান, নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবেদন জানিয়ে আসছে। যৌক্তিক ঘোষণা সত্ত্বেও ৫ বার আশ্বাস দেওয়ার পরও এসব দাবি বাস্তবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ।

ফলে সারা দেশের ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারীর সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ টিকা কেন্দ্রে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এবং সদ্য সমাপ্ত টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) কর্মসূচির সব রিপোর্ট তৈরি ও প্রদান বন্ধ রেখে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি শুরু করে।

এ কর্মবিরতির কারণে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য সহকারী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে কর্মবিরতি এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।

নেতারা জানান, তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টিসিভি টিকা সফলভাবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতির কোনো দৃশ্যমান বাস্তবায়ন হয়নি। বরং টিসিভি বাজেট বরাদ্দ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ২৩ নভেম্বর চাঁদপুর জেলার দুই সহকর্মী—স্বাস্থ্য সহকারী আরিফ মোহাম্মদ রুহুল ইসলাম ও শাহজালাল—কে কুমিল্লা জেলায় বদলি করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক। এ কারণেই তারা বাধ্য হয়ে আবারও কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।

নেতারা বলেন, আমরা আমাদের দুই সহকর্মীর বদলির আদেশ প্রত্যাহার চাই। এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের ৬ দফা দাবির জিও প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা না হলে কর্মসূচি আরও কঠোর করা হবে।

স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবি
১. নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান।
২. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া।
৩. পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা।
৪. সকল স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা।
৫. বেতন স্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা।
৬. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।

নেতারা আরও বলেন, আমরা কর্মবিরতিতে যেতে চাইনি। বিভিন্ন দাবিতে পর্যায়ক্রমে আন্দোলন করেও প্রতিবার কর্তৃপক্ষ একেক অজুহাতে আমাদের থামিয়েছে। আমরা কথা রেখেছি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রাখেনি। এবার আমরা অনড়। শুধু আশ্বাস নয়, বাস্তবায়ন চাই। আমাদের ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS