‘ভারত হাসিনাকে ফেরত না দিলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার হবে’

‘ভারত হাসিনাকে ফেরত না দিলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার হবে’

ভারত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে না দিলে তার (হাসিনা) অনুপস্থিতিতেই বিচার হবে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক আদালতের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

শনিবার (০১ মার্চ) নগরের পিটিআই মিলনায়তনে কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এক-দেড় মাসের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার কাজ শুরু হবে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিশেষ মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন কয়েকটি এ মাসের মধ্যে পাব আশা করছি। প্রতিবেদন হাতে পেলে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা হচ্ছে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ট্রাইব্যুনাল থেকে পেয়েছি। সেটা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হবে, যাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরেকটা হচ্ছে, হাসিনা ভারতে আছেন আর সে দেশের সঙ্গে আমাদের বহিঃসমর্পণ চুক্তি আছে। সেই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া কোনো আসামি যদি ভারতে থাকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করব এবং চুক্তি অনুযায়ী তারা সেটা করতে বাধ্য। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধটা করাও হয়েছে। সেটা তারা পেয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি। এখন ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা একটা অপরাধীর পক্ষে অবস্থান নেবেন নাকি গণহত্যা ও ন্যায়বিচার প্রশ্নে একটি আইনের শাসনের প্রতি তাদের অবস্থান গ্রহণ করবেন। সেই কারণে আমরা আশা করছি, ভারত যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তবে শেখ হাসিনা প্রত্যর্পণ করবেন, তা না হলে আইন অনুযায়ী তার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থায় বিচার চলমান থাকবে।

মামলার বিচারের রায় কবে হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, বিচার শুরু হয়ে গেলে বলা যাবে, কতদিন লাগবে। ডকুমেন্টস আছে, ভিডিও আছে, লাইভ এভিডেন্স আছে, সেগুলো আদালত নির্ধারণ করবেন। কতদিন সময় তারা নেবেন। তবে আমরা চাই ট্রাইব্যুনালের বিচার বিরতি ছাড়া চলুক। সেক্ষেত্রে দ্রুত সম্ভব। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড ন্যায়বিচার নিশ্চিত রেখে বিচারটা করতে হবে। সুতরাং আমরা যেমন তাড়াহুড়া করছি না, আবার খেয়াল রাখতে হবে অহেতুক বিলম্ব হয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষা যাতে নষ্ট না হয়।

প্রতিটি কাজই চ্যালেঞ্জিং জানিয়ে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এটা সাধারণ একটা খুনের মামলা নয়, গুলি করার মামলা নয়। ৫৬ হাজার বর্গ মাইলজুড়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। দুই হাজারের মতো মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো মানুষ আহত হয়েছেন। এটার সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এভিডেন্স কালেক্ট করা, ডিজিটাল ডকুমেন্টারি এভিডেন্স, সরাসরি গ্রাউন্ডের সাক্ষী গ্রহণ করা। ডিজিটাল এভিডেন্সগুলোকে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত রেখে বিচারের উপযোগী করা এসব চ্যালেঞ্জের কাজ। সব জায়গায় আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা ট্রাইব্যুনালে আসছেন না। ফলে আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণশুনানির আয়োজন করেছি। আমরা ছাত্রদের কাছে যাচ্ছি, তারা হচ্ছে ফার্স্ট হ্যান্ড। তাদের কাছে যেসব প্রমাণ আছে সেগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছি। সে ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আসছে। একটা নিখাদ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া ট্রাইব্যুনালের চ্যালেঞ্জ। তবে পরাজিত দোসর ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। সেগুলোকে কাউন্টার করা আমাদের দ্বিতীয় পর্বের চ্যালেঞ্জ। সর্বোপরি প্রধান চ্যালেঞ্জ ন্যায়বিচার ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। এই দুটো জিনিসের মাঝখানে ভারসাম্য রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী মামলা এবং সাধারণ মামলা এক নয়। এখানে দেখতে হবে ওয়াইড স্পেস সিস্টেমেটিক ছিল কিনা, এটা রাষ্ট্রের কমান্ড স্ট্রাকচার থেকে নির্দেশ এসেছে কিনা এবং একইভাবে অতীতে সারা দেশব্যাপী এটা সংঘটিত হয়েছে কিনা। ২০২৪ সালে যে মানবতাবিরোধী অপরাধের ডিজিটাল এভিডেন্স পেয়েছি। জাতিসংঘ পেয়েছে, সুতরাং কে বাদী বা বিবাদী, কে চিনলো কি চিনলো না, গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ কারা এটি নির্দেশ দিয়েছেন, কারা ঘটিয়েছে।

আজ সিলেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, বিচার বিভাগ ও সিলেট বিভাগের পুলিশ এবং প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS