দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতি তার নিজের খেয়ালে চলে।তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করার শক্তি যেমন মানুষের হাতে নেই, তেমনি জানা নেই আত্মরক্ষার কৌশলও।
তিনি আরও বলেন, তবে দুর্যোগ মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ জন্য গণসচেতনতা যেমন দরকার, তেমনি দরকার ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো অবকাঠামো নির্মাণ, উঁচু বাঁধ তৈরি। একই সঙ্গে টেকসই দুর্যোগ মোকাবিলা অনেকটাই নির্ভর করছে আমাদের কর্মকাণ্ড ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের ওপর কতটা জোর দিচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালী হোটেল অবকাশে দুর্যোগকালীন জেন্ডার সংবেদনশীল রিপোর্টিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের প্রথম সারির এনজিও লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ও ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) ও যুগ্ম সচিব নাহিদা সুলতানা মল্লিক, উপসচিব সানজিদা ইয়াসমিন, কমিউনিকেশন ও মিডিয়া স্পেশালিষ্ট সৈয়দ আশরাফ উল ইসলাম ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম।
লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদ বলেন, লাইট হাউজ একটি বেসরকারি অলাভজনক, মানবাধিকার ও উন্নয়নমূলক সংস্থা। ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে দরিদ্র, প্রান্তিক ও উচ্চ ঝুঁকির জনগোষ্ঠী, যৌন সংখ্যালঘু, হিজড়া, আদিবাসী এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। লাইট হাউজ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আরটিকেল ১৯ ও ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের আর্থিক সহায়তায় কুড়িগ্রাম জেলার ৫টি উপজেলায় (কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, রাজিবপুর) নতুন প্রকল্পে সফলতার সঙ্গে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির অন্যতম লক্ষ্য হলো সাংবাদিক ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে দুর্যোগকালীন নারী, কিশোরী ও অন্যান্যদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সময় উপযোগী পদক্ষেপ সঠিক ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত পরিমাণ উদ্ধার সামগ্রী, প্রচুর পরিমাণ প্রশিক্ষিত জনবল হতে পারে ক্ষয়-ক্ষতি কমানোর ও জানমাল রক্ষার উপায়। এজন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। টেকসই দুর্যোগ মোকাবিলা অনেকটাই নির্ভর করছে আমরা কতটা জোর দিচ্ছি প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের ওপর। আইপিসিসি’র পঞ্চম আসেসমেন্টের প্রতিবেদন অনুসারে জলবায়ুজনিত দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সফল না হলে নিরাপদ, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাত-সহিষ্ণু সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। তিনি লাইট হাউসের মতো বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পার্টনারশিপ করে উত্তরবঙ্গের সমস্যাগুলো স্থানীয়ভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) ও যুগ্ম সচিব নাহিদা সুলতানা মল্লিক বলেন, দেশের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায়ই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তবে, এসব পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশেই না, বরং সারাবিশ্বেই দুর্যোগ লেগেই আছে। রাষ্ট্রীয় সুপরিকল্পনার মাধ্যমে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় আশ্রয়কেন্দ্র, আরো বেশি সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা যেতে পারে এবং দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতাকে আরো টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে এবং এ সাফল্য ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সানজিদা ইয়াছমিন বলেন, বলেন, বন্যা ও জলাবদ্ধতার যে কারণগুলো মানুষের সৃষ্টি, তার সমাধানে সরকারের ধারাবাহিক পদক্ষেপ দরকার। বন্যা নিয়ন্ত্রণে নদী, খাল, বিল, হাওড়, ও অন্যান্য জলাভূমি দখলমুক্ত করতে হবে। শহরের আশপাশে জলাভূমি ভরাট করে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ রোধ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ অনেক জেলা শহরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে অসম্ভব। শহরে জলাবদ্ধতা কমাতে হলে এলাকাভিত্তিক সমাধান না খুঁজে পুরো নগরী এবং আশপাশের এলাকার জন্য পরিকল্পনা, সঠিক নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা দরকার।
কমিউনিকেশন ও মিডিয়া স্পেশালিস্ট সৈয়দ আশরাফ উল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রামের পাঁচটি উপজেলায় দারিদ্রপীড়িত এবং ঝুঁকিপ্রবণ নারী ও কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা মোকাবিলা লাইট হাউস সংস্থাটির কর্মকর্তারা যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলায় ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগের মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের দুর্যোগের সময় আত্মরক্ষা ও জীবন বাঁচার উপর জানতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছেন। এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।