কিছুক্ষণ পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) প্রবেশপথে এসে দাঁড়াচ্ছে ট্রাক, প্রাইভেট কার, সিএনজি, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান ও রিকশা। যানবাহনগুলো থেকে নামানো হচ্ছে বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার, কাপড় ও বিশুদ্ধ পানিসহ জরুরি দ্রবাদি।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দ্বিতীয় দিনের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে টিএসসির প্রবেশপথে গণত্রাণ সংগ্রহ চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে জড়ো হচ্ছেন সেখানে। কেউ কেউ নিয়ে এসেছেন নগদ অর্থ।
টিএসসির বুথ থেকে দায়িত্বরত আশরেফা খাতুন জানান, টিএসসিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৭২ টাকা নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। এ ছাড়া মানুষ বিপুল পরিমাণে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো কাপড় জমা দিচ্ছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সারা দিনে ১৪ লাখ ৭৬৫ হাজার ১৭৩ টাকা নগদ অর্থ এবং সর্বমোট ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা জমা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসির জনতা ব্যাংক গেট দিয়ে প্রবেশ করে মূল ফটকে ত্রাণ জমা শেষে যানবাহনগুলো পূর্ব গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী হ্যান্ডমাইক দিয়ে এই পথের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন। টিএসসির সামনে বুথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নগদ অর্থ তালিকাভুক্ত করছেন। একদল শিক্ষার্থী জমা ত্রাণ টিএসসির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন।
জমা দেওয়া ত্রাণের মধ্যে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুটসহ শুকনা খাবার, স্যালাইন, স্যানিটারি প্যাডসহ জরুরি ওষুধ, মোমবাতি, দেশলাই, গুড়, চানাচুর, চাল-ডাল, খই, নানারকম পোশাক, বিশুদ্ধ পানি এবং পানি শুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য জরুরি দ্রব্যাদি রয়েছে। এর মধ্যে শুকনো কাপড়সহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং শুকনো খাবার টিএসসি ক্যাফিটেরিয়ায় স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। খেজুর-গুড়সহ অন্যান্য কয়েকটি দ্রব্য অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া কক্ষে রাখা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমম্বয়ক মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের দেওয়া ত্রাণ নিয়ে গতকাল পাঁচটি ট্রাক টিএসসি থেকে বন্যাদুর্গতদের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। আজ ১০টি ট্রাক যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে যে পরিমাণ ত্রাণ আসছে, তাতে আরও ট্রাক প্রয়োজন হতে পারে। রাত ৮টা পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ চলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন জানান, টিএসসিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে সেচ্ছসেবক হিসেবে কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের অনেক শিক্ষার্থীও সেচ্ছাসেবায় যুক্ত রয়েছেন।
টিএসসিতে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল নাশেখ। তিনি বলেন, এত মানুষ টিএসসিতে ত্রাণ নিয়ে আসছে। একটি অভূতপূর্ব ব্যাপার। দেশের মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। বৃত্তবান থেকে নিম্নবৃত্ত সবাই নিজের সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ জমা দিচ্ছেন। এই টিএসসি দেশপ্রেমের আইকনে পরিণত হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হলের উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা নগদ অর্থ ও শুকনো কাপড় সংগ্রহ করছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকগুলো দল ইতোমধ্যে ফেনী ও নোয়াখালীতে উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়েছে।