ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের পদত্যাগী সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে নিয়ে রাজনীতিতে টানাটানি শুরু হয়েছে। ৬৮ বছরের এই প্রবীণ নেতা দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত লোকসভায় তিনি কংগ্রেসদলীয় নেতা ছিলেন। ছয় মেয়াদে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
অধীর রঞ্জন এবার বহরমপুর আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের কাছে ৮৫ হাজার ভোটে হেরে যান। পরাজয়ের দায় নিয়ে তিনি গত ২১ জুন কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনের আগে মমতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, অধীর চৌধুরীকে হারানো হবেই। শেষ পর্যন্ত মমতারই জয় হয়।
অধীর চৌধুরীর পদত্যাগের পর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এখন থেকে আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি।’
তৃণমূলের দাবি, অধীর চৌধুরীর কারণেই এবার রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের নির্বাচনী জোট হয়নি। জোট হয়েছে সিপিএমের সঙ্গে। তৃণমূলের অনেক নেতা চাইছেন, এবার অধীর চৌধুরী ফিরে আসুন তৃণমূলে।
আবার বিজেপিও অধীরকে দলে টানার চেষ্টা করছে। কারণ, বহরমপুরে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে তাঁর। তাই তাঁকে দলে পেতে বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। অবশ্য দুই দল তাঁকে চাইলেও এ নিয়ে এখনো মুখ খোলেননি তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য শমিক ভট্টাচার্য বলেছেন, এখন অধীর চৌধুরীর বিজেপিতে যোগ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। কংগ্রেস তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তিনি রাজনীতিতে একজন ভালো খেলোয়াড় হলেও ভুল খেলেছেন। ভুল দলে আছেন।
কংগ্রেসে থেকে তৃণমূলের বিরোধিতা করা যাবে না, এই সত্যটিকে তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। তিনি যদি তৃণমূলের বিরোধিতা করতে চান, তবে তাঁর বিজেপি ছাড়া অন্য পথ খোলা নেই।
বিজেপির আরেক সংসদ সদস্য সৌমিত্র খা বলেছেন, অধীর চৌধুরীর উচিত আলাদা দল গঠন করা। মুর্শিদাবাদ ও মালদহে তাঁর যে প্রভাব রয়েছে, তাতে তিনি সফল হতে পারেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মমতাবিরোধী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে পরিচিত।
অন্যদিকে তৃণমূলের সংসদ সদস্য ও লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমাদের নেত্রী মমতার পরামর্শ অনুযায়ী ও তাঁর দেওয়া আসনগুলো নিলে আজ অধীর চৌধুরী সংসদ সদস্যই থাকতেন। মালদহও তাঁর হাতে থাকত। তাতে তাঁর হাতে কয়েকটি আসন চলে আসত। আর বিজেপির ছয়–সাতটি আসন কমে যেত। তাঁর বাধার জন্যই তা হয়ে ওঠেনি। তাই অধীর দল ছাড়লে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোটের রাস্তা আরও প্রশস্ত হবে। তবে আমরা বৃহত্তর রাজনীতিতে ইন্ডিয়া জোটেই আছি।’