ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের বহুল প্রতীক্ষিত রাজ্যাভিষেকের মহোৎসবের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে ব্রিটিশ জনগণ। বিশ্ববাসীর উৎসাহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই আয়োজন।
সত্তর বছর পর আরেকটি রাজ্যাভিষেকের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত যুক্তরাজ্য। প্রস্তুত ব্রিটেন, অপেক্ষায় মানুষ। সিংহাসনে আরোহনে যে পথে হেঁটেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, ৭০ বছর পর সেই পদাঙ্কই অনুসরণ করবেন তার ছেলে চার্লস।
কিন্তু রাজার কাজ কী? রাজা যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান। তবে তার ক্ষমতা প্রতীকী এবং আনুষ্ঠানিক। তিনি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন।
প্রতিদিন ব্রিটিশ সরকারের কাজের রিপোর্ট তার কাছে লাল রঙের চামড়ার একটি বাক্সে করে পাঠানো হয়, যার মধ্যে থাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈঠকের আগে সে সম্পর্কে ব্রিফিং, অথবা কাগজপত্র যাতে তার স্বাক্ষর করা প্রয়োজন।
সাধারণত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রতি বুধবার বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করে সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে রাজাকে অবহিত করেন।
এসব বৈঠক একান্ত ব্যক্তিগত এবং সেখানে যেসব কথাবার্তা হয় সেগুলোর আনুষ্ঠানিক কোনো রেকর্ড রাখা হয় না।
এছাড়াও রাজার আনুষ্ঠানিক সংসদীয় কিছু ভূমিকা রয়েছে-
সরকার নিয়োগ
সাধারণ নির্বাচনে যে দল জয়ী হয় তার প্রধানকে সরকার গঠনের জন্য বাকিংহাম প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সাধারণ নির্বাচনের আগে রাজা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও রাজার ভাষণ
এক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে রাজা সংসদীয় বছর শুরু করেন। এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় স্টেট ওপেনিং। হাউজ অব লর্ডসের একটি সিংহাসনে বসে রাজা ভাষণ দেন- যাতে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
রাজার অনুমোদন
যখনই পার্লামেন্টে কোনো বিল পাস হয় সেটিকে আইনে পরিণত করার জন্য রাজাকে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করতে হয়। শেষ যে বছর এরকম রাজকীয় অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়, সেটি ছিল ১৭০৮ সালের ঘটনা।
এছাড়াও প্রত্যেক বছরের নভেম্বর মাসে রাজা বার্ষিক স্মরণ অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এটি অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনের সেনোটাফ বা জাতীয় স্মৃতি স্তম্ভে।
বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব রাষ্ট্রপ্রধান ব্রিটেন সফরে আসেন, রাজা তাদের নিমন্ত্রণ জানান। এছাড়াও ব্রিটেনে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদেরও সাথেও তিনি নিয়মিত সাক্ষাৎ করে থাকেন।
রাজা তৃতীয় চার্লস তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানি গিয়েছিলেন যেখানে তিনি পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়েছেন। তিনিই প্রথম ব্রিটিশ রাজা যিনি জার্মান পার্লামেন্টে ভাষণ দেন।
ব্রিটিশ রাজা কমনওয়েলথেরও প্রধান। ৫৬টি স্বাধীন দেশ নিয়ে এটি গঠিত এবং এই কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫০ কোটি। ব্রিটেনের রাজা এই কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে ১৪টির রাষ্ট্র-প্রধান।
রাজা তৃতীয় চার্লসের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কুইন কনসোর্ট ক্যামিলা তাকে সহযোগিতা করেন। এছাড়াও রাজ পরিবারের সঙ্গে যে ৯০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক রয়েছে সেগুলোকেও তিনি সমর্থন দিয়ে থাকেন।
এসব দাতব্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এবং যারা ধর্ষণ কিম্বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করা।