আড়তদারদের কারসাজির কারণে এবারও জমেনি নীলফামারী জেলা শহরের ট্রাফিক মোড়ের চামড়ার হাট।
ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি (ভাসমান), পাইকারি ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা।
টানা দরপতন ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় প্রভাব পড়েছে চামড়ার বাজারে। এতে দুই-একজন ব্যবসায়ী চামড়া কিনলেও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে নিজেদের ইচ্ছামতো চামড়া কিনেছেন আড়তদার ও বড় ব্যবসায়ীরা।
জেলার ছয় উপজেলায় চামড়া বেচাকেনায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। তাই ভয়ে চামড়া কিনছেন না বড় ব্যবসায়ীরা। সাধারণত কোরবানির পর জেলা শহরের বড় বাজার ট্রাফিক মোড়ে লাখ লাখ টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়।
এবার ব্যবসায়ীরা জানান, এবার গরুর বাজার বেশি হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কোরবানিদাতার সংখ্যা খুবই কম ছিল। এজন্য চামড়া আমদানিও কমেছে।
ঈদুল আজহার পরদিন মঙ্গলবার (১৮ জুন) বাজারে অল্প কয়েকজন ব্যবসায়ী চামড়া কিনলেও দামে সন্তষ্ট না হয়ে হতাশ হয়ে কোরবানিদাতারাসহ অনেকেই চামড়া ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। আবার অনেকে লবণ দিয়ে রাখার কথা বলেন।
আইনুল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, চামড়ার দাম কম হওয়ায় শুধু ব্যবসায়ীরা নন, এতিমখানার-মাদরাসা সংশ্লিষ্টরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
একই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মফিজার রহমান জানান, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলেও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। ভাই যে ব্যবসাই করেন, লোকসান সব জায়গায়। দাম চাইলে বড় বড় ব্যবসায়ীরা বলেন, মন চাইলে বিক্রি করেন না চাইলে বাড়ি নিয়া যান। ঈদের বাজারে লাভের আশায় ছোট বড় ১৫০টি চামড়া ৭৫ হাজার টাকায় কিনে এখন লোকসান গুণতে হচ্ছে অর্ধেকেরও বেশি। পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন আড়তদার ও ট্যানারির মালিকরা।
অপরদিকে গত বছর খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর এবার খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৫ টাকা করা হলেও সে দামের ধারেকাছেও বিক্রি করা যায়নি। ফলে কোরবানি দাতা, ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়ে নামমাত্র দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় একটি পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।
নীলফামারী চেম্বার অব কর্মাচ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, দুই হাত বদলের পর তৃতীয় ধাপে আড়তদার চামড়ায় লবণ দিয়ে ঘরে রাখেন আর দাম বাড়ার অপেক্ষায় থাকেন। পরে চামড়াগুলো ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চড়া মূল্যে কিনে নিয়ে যান। এখানে তারা প্রচুর লাভ করেন।
তিনি বলেন, এতে আড়তদার কিংবা ট্যানারির মালিকদের লোকসান গুণতে হয় না। কিন্তু পাড়া মহল্লা ঘুরে চামড়া কিনে সমস্যায় পড়েন মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীরা। ট্যানারির মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন এসব ব্যবসায়ীরা।