এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়

এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়

পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, একটি মহল বর্তমানে সংস্কার এবং নির্বাচন যেভাবে মুখোমুখি করে ফেলেছে, এটি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক।

যারা সংস্কার শেষ করার পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করার কথা বলছেন, তাদের বলতে চাই- যেটি শেষ হয়ে যায়, সেটি সংস্কার নয়। কারণ সংস্কার কখনো শেষ হয় না। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।  

শুক্রবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস্ ক্লাবে ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে এ ইফতারের আয়োজন করে বিএনপি।

তারেক রহমান বলেন, দেশের বর্তমান সংবিধান যেটিকে ইচ্ছামতো কাঁটাছেড়া করে পতিত পলাতক স্বৈরাচার তাদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করে ফেলেছিল। বিএনপি মনে করে, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে খেতাবি কিংবা পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার এবং আচরণের ব্যবহারিক প্রয়োগ। জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে দিয়েই কেবল সংস্কার প্রক্রিয়া টেকসই, সফল এবং কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গণইস্যুকে মুখ্য ইস্যু বানাতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের সংশয় ও সন্দেহের জন্ম দেওয়া হচ্ছে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবারও বলতে চাই, সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। এমন পরিস্থিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার অর্থ সারাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। সুতরাং সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। কারণ নাগরিকরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী না হলে কোনো সংস্কারই কিন্তু টেকসই হবে না।  

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট মাফিয়া সরকারের পতনের পর দীর্ঘ দেড় দশকে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ গড়ায় এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে আমাদের সামনে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতি কর্মীদের পাশাপাশি বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ এবং পেশাজীবীদের দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আরো কার্যকর ভূমিকা পালনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্র এবং রাজনীতির স্বার্থেই পেশাজীবীদের সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। পেশাজীবী মেধা ও অভিজ্ঞতা রাষ্ট্র উন্নয়ন পরিকল্পনায় কাজে লাগানোর সুযোগ অবশ্যই রয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক সাংগঠনিক কাঠামোতে পেশাজীবীদের অনেকের পক্ষেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে অবদান রাখার সুযোগ হয়তো সীমিত। সেজন্য রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনের লক্ষে বিশিষ্টজন এবং পেশাজীবীদের মেধা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য বিএনপি সংবিধানে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে।

তারেক রহমান বলেন, বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিধি ব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের হাতেই রাষ্ট্র পরিচালনায় ভার বর্তায়। তবে রাজনীতিবিদ সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষেত্রে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সুশীল সমাজ এবং পেশাজীবীদের ভূমিকা ও অবদান অনস্বীকার্য।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ, অর্থনীতিবিদ ও ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য ড. সুকোমল বড়ুয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি আয়োজিত এ ইফতার মাহফিলে বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধির এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS