বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থামেনি বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো ওত পেতে বসে আছে কীভাবে বাংলাদেশের অগ্রসরমাণ অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশের সব নাগরিককে শুভেচ্ছা ও পবিত্র রমজানের মোবারকবাদ জানান।
সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়—এই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেই দেশ পরিচালনা করা হয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাঙালি বীরের জাতি। যুদ্ধ করে আমরা এ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। আমাদের কোনো প্রভু নেই, আছে বন্ধু। তাই কারও রক্তচক্ষু বাঙালি জাতি কোনো দিন মেনে নেবে না। প্রয়োজন হলে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সম্মান রক্ষা করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসররা এখনো তৎপর রয়েছে পরাজয়ের বদলা নিতে। সুযোগ পেলেই তারা আঘাত হানবে। তাদের সামনে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে ছলেবলে-কৌশলে নিশ্চিহ্ন বা দুর্বল করতে পারলেই পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য।
এবারের রমজান মাস সামনে রেখে বেশ আগে থেকেই চিনি, ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেলসহ কয়েকটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তোলা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। একচেটিয়া বাজার তৈরি করে অধিক মুনাফা যাতে কেউ করতে না পারে, সে জন্য ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং প্রায় সমপরিমাণ আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, আমদানি করা ফল, লেবু, তরমুজ, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা চড়া ছিল। তবে এসব পণ্যের দাম কয়েক দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। সরকারপ্রধান বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের কষ্ট লাঘবের।
সরকারি ও দলগতভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন নিরুৎসাহিত করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এবং এর সব সহযোগী সংগঠন নির্দেশমতো তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গরিব-দুস্থদের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, রমজান মাসের শুরু থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য রাজধানী ঢাকার অন্তত ২৫টি স্থানে ট্রাকে করে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবি প্রথম পর্যায়ে সারা দেশের এক কোটি কার্ডধারী পরিবারের জন্য সুলভ মূল্যে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি এবং ছোলা এই ৫টি পণ্য বিতরণ করছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার কার্ডধারী পরিবারের জন্য চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা ও খেজুর এই ৬টি পণ্য বিতরণ করছে। ঈদ উপলক্ষে সারা দেশের ১ কোটি ৬২ হাজার ৮০০ পরিবারের জন্য সরকার ১ লাখ ৬২৮ মেট্রিক টন চালের বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি পরিবার বিনা মূল্যে ১০ কেজি করে চাল পাবে।
স্বাধীনতা দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকেও স্মরণ করেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমি বারবার এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি।’
বিগত ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে সরকার পরিচালনা করার অভিযাত্রা একেবারেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে দেশের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ২৫ দশমিক ১ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। তিনি আরও জানান, এখন দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিশুমৃত্যুর হার নেমে এসেছে প্রতি হাজারে ২১ জনে এবং মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬১ জনে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫৪তম দিবসে আসুন সব কূট-কৌশল-ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।