উৎপাদন বাড়ছে কফির দেশেই বাজার ৫শ কোটি টাকার

উৎপাদন বাড়ছে কফির দেশেই বাজার ৫শ কোটি টাকার

কফির সুঘ্রাণে মন কতটা আন্দোলিত হয় তা নতুন করে না বললেও হবে। দেশে এখনো চায়ের বিকল্প হিসেবে কফি জায়গা করে না নিলেও এর জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে দেশে কফির উৎপাদনও বাড়ছে। ২০২০ সালে যেখানে ৫৫.৭২ টন কফি উৎপাদন হয়েছে, সেখানে ২০২২ সালে উৎপাদন হয়েছে ৬২ টন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশে বছরে কফির চাহিদা ৯০০ থেকে ১ হাজার টন। সে হিসাবে বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ কফি উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। চাহিদার প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ফলে কফি চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু দেশেই কফির বাজার প্রায় ৫০০ কোটি টাকার। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নতুন প্রজন্ম এখন কফি পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীর পাশাপাশি মফস্বল শহর, এমনকি গ্রামেও রাস্তার পাশে চায়ের দোকানেও কফি বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে দেশে কফির বাজারের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, নব্বইয়ের দশকে দেশের পার্বত্য জেলাগুলোয় সীমিত পর্যায়ে সনাতন পদ্ধতিতে কফির চাষ শুরু হয়। তা এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাচ্ছে। বর্তমানে শুধু পাহাড়ে নয়, কফি চাষ ছড়িয়ে পড়েছে নীলফামারী, টাঙ্গাইল ও মৌলভীবাজারসহ উত্তরের বেশ কয়েকটি জেলায়।

সম্প্রতি বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার অনেক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনদিন কফির আবাদ বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে কফির জাত, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন আর কফি চাষে কৃষকদের দক্ষ করে তুলতে সরকার নানা প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার কৃষক দয়া লেন্দু চাকমা বলেন, বাগানে সেচ দেওয়া গেলে কফির ভালো ফলন হয়। এছাড়া দামও অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি। কফি চাষে   আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। একটু আবছায়া অঞ্চলেই কফির চাষ ভালো হয়। বড় কোনো ফলদ বৃক্ষের পাশে অনায়াসেই কফির চারা রোপণ করা যায়। ফল আসতে বছর তিনেক সময় লাগে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে দুই ধরনের কফির চাষ হচ্ছে। একটি আফ্রিকার জাত কফিয়া ক্যানিফোরা, যা রোবাস্তা কফি নামে পরিচিত। অন্যটি কফিয়া অ্যারাবিকা। বিশ্ব জুড়ে বিপুল চাহিদার এই কফিটি পর্বত-কফি নামেও বেশ পরিচিত। কৃষকরা জানান, পাহাড়ে স্থান ভেদে গাছের আকার আকৃতি ভিন্ন হয়। ফলনেও ভিন্নতা দেখা যায়। তবে প্রতি গাছে গড় ফলন হয় ৭ থেকে ১০ কেজি। সে হিসাবে প্রতি হেক্টরে রোবাস্তার ফলন সাড়ে ৭ হাজার থেকে ১১ হাজার কেজি। আর প্রতি অ্যারাবিকার ফলন সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার কেজি।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ু বাণিজ্যিক কফি চাষের জন্য উপযোগী। অ্যারাবিকা জাতের জন্য তুলনামূলক বেশি উচ্চতার (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুট) প্রয়োজন হয়। রোবাস্তা বাংলাদেশের সব ধরনের উচ্চতায় ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। ফুল ফোটার সময় সেচ দিলে বেশি ফলন পাওয়া যায়। কফি গাছে রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি কম, তাই অল্প পরিচর্যায় এর চাষ সম্ভব।

উল্লেখ্য, পাহাড়ে কফি ও কাজুবাদাম চাষের সম্প্রসারণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২১১ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। 

এই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শহীদুল ইসলাম জানান, বিশ্বের পাশাপাশি দেশেও কফির বাজার বাড়ছে। দেশের পাহাড়ি এলাকায় কফি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দাম ও চাহিদা দুটোই বৃদ্ধি পাওয়ায় পাহাড়ি এলাকার চাষিদের মধ্যে কফি চাষে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকেও সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। শহীদুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯ ব্যাচ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২ হাজার ৭৪৪টি কফি জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী শেষ হয়েছে। এছাড়া, ১৬৪টি কফি চাষের বাণিজ্যিক প্রদর্শনী শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় চলতি মৌসুমে কৃষককে বিনা মূল্যে ২০ লাখ কফি ও কাজুবাদামের চারা বিতরণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS