অবশেষে আকাশে ডানা মেলল তুরস্কের নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরি ৫ম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেট। জেটটির নাম রাখা হয়েছে ‘কান’ তুর্কি ভাষায় যার অর্থ ‘রাজাদের রাজা’।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দেশটির রাজধানী আঙ্কারার মুর্টেড এয়ারফিল্ড থেকে অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়ন করে। পরে ১৩ মিনিটের ফ্লাইট শেষে স্টিলথ ফাইটারটি সফলভাবে অবতরণ করে।
ফাইটার জেটের ‘স্টিলথ কনসেপ্ট’ হল এমন কিছু আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় যা একটি ফাইটার জেটকে রাডার ‘ফাঁকি’ দিতে সাহায্য করে। বলা হয়ে থাকে এফ-২২ এর মত মার্কিন স্টিলথ ফাইটার জেট গুলোর রাডার সিগনেচার এতই কম হয়ে থাকে যে; দৃষ্টিসীমায় আসার আগে জেটটি রাডারে এটি পাখি হিসেবে ভ্রম তৈরি করতে পারে।
কান যুদ্ধবিমানের লঞ্চ সিট পরীক্ষা, পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের স্ট্যাটিক পরীক্ষা, নিয়ন্ত্রণ পৃষ্ঠের স্ট্যাটিক পরীক্ষা, ল্যান্ডিং গিয়ার পরীক্ষা, অ্যাভিওনিক সিস্টেম পরীক্ষা, জ্বালানি পরীক্ষা, ইঞ্জিন স্টার্ট-আপ পরীক্ষা এবং ট্যাক্সিইং পরীক্ষা আগেই করা হয়েছে। আর গত কাল হয়ে গেল ফ্লাইট টেস্ট।
তুর্কির এই ন্যাশনাল ফাইটার তৈরির প্রকল্পে পাকিস্তান এবং আজারবাইজানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এই ন্যাশনাল ফাইটার তৈরির পরিকল্পনা তুর্কির আগে থেকেই ছিল। তবে রাশিয়া থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ কেনার অজুহাতে ন্যাটোর এফ-৩৫ ফাইটার কনসোর্টিয়াম থেকে বাদ পরে তুরস্ক। যদিও এফ-৩৫ স্টিলথ ফাইটারের এয়ারফ্রেমের মধ্যভাগ বা ফিউজেলাজ তৈরি হত তুরস্কেই।
এই প্রতারণা তুর্কির ন্যাশনাল ফাইটার তৈরির প্রকল্পে গতিসঞ্চার করে এবং প্রকল্পটিকে স্টিলথ ফাইটার তৈরির প্রকল্পে রূপান্তর করা হয়। যার অভিজ্ঞতা এফ-৩৫ স্টিলথ ফাইটারের ফিউজেলাজ তৈরির মাধ্যমে ইতোমধ্যেই তুরস্ক পেয়ে গেছে।
প্রতিরক্ষা শিল্পে তুর্কিয়েকে আত্মনির্ভর করে তুলতে দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সংকল্প এবং ন্যাটো সদস্য হওয়ার পরেও দেশটির প্রতি পশ্চিমাদের একচোখা আচরণ; তুরস্কে বাইকার বা এসেলসানের মত বিশ্বমানের ডিফেন্স টেক কোম্পানি তৈরিতে সহয়তা করে।
কান ফাইটার জেটে ব্যবহৃত হবে এসেলসানের তৈরি ‘মুরাদ’ অ্যাক্টিভ ইলেক্ট্রনিক্যালি স্ক্যান অ্যারে বা এইএসএ ফায়ার কন্ট্রোল রাডারের উন্নত ভার্শন। কয়েক বছর আগে তুর্কি বিমান বাহিনীতে ব্যবহৃত এফ-১৬ জেট গুলোর আপগ্রেডেশন প্যাকেজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নয়ছয় শুরু করলে ‘মুরাদ’ এইএসএ ফায়ার কন্ট্রোল রাডার তৈরি করে এসালসন।
বর্তমানে তুর্কি কোম্পানি তুসাশ ইঞ্জিন ইন্ডাস্ট্রিস (টিইআই) ‘সুপার ক্রুজ’ সক্ষম জেট ইঞ্জিন উৎপাদনে কাজ করছে। যা কান ফাইটার জেটে ব্যবহৃত হবে। তবে এই ইঞ্জিন পূর্ণরূপে তৈরি হতে সাত থেকে আট বছর লেগে যেতে পারে। এই সময়টাতে মার্কিন কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রনিক্সের এফ১১০ সিরিজের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে বলে একাধিক তুর্কি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। টিইআই এর সঙ্গে এই ইঞ্জিনটিও তুরস্কে উৎপাদনে লক্ষ্য আলোচনাও চলছে।
‘সুপার ক্রুজ’ জেট ইঞ্জিনের এমন একটি সক্ষমতা যা অতিরিক্ত জ্বলানি পুড়ানোর ‘আফটার বার্ন’ প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়াই ‘সুপার সনিক’ বা শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলতে ফাইটার জেটকে সাহায্য করে। তুর্কি কোম্পানি তুসাশ ইঞ্জিন ইন্ডাস্ট্রিস ‘টিআই-টিএফ১০০০০’ নামে টার্বোফ্যান ইঞ্জিন তৈরি করছে যা কান ফাইটারকে এফ-২২ বা এফ-৩৫ এর মত ‘সুপার ক্রুজ’ সক্ষমতা এনে দেবে।