স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ বলে মনে করেন শান্তিতে নোবেল বিজীয় ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন কোন রকম বিলম্ব কিছুতেই আর গ্রহণযোগ্য নয়।
রোববার (২২ অক্টোবর) ইউনূস সেন্টার থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার বিরোধ বহু পুরনো একটি সমস্যা। ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি ইসরাইলের আচরণ এই সমস্যাটি ক্রমেই আরও জটিল করে তুলছিল এবং একটি বিস্ফোরণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। কিন্তু যা ঘটলো তা একটি সভ্য সমাজে কোনো বিচারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, এই সমস্যার এখন একটিই সমাধান, আর তা হলো দুটি আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টি, যে বিষয়ে জাতিসংঘের একটি সিদ্ধান্ত থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনে জাতিসংঘের এই দীর্ঘ-উপেক্ষিত সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নই এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। নতুবা পরিস্থিতি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে তা কেউ জানে না। বর্তমান পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা পৃথিবীতে।
ড. ইউনূসের মনে করেন, একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয়। আর এটি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ কাজে যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত অগ্রসর হলে অন্যরাও তাকে অনুসরণ করবে। বাইডেন প্রশাসনকে অবিলম্বে এই অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটিতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
এই বিরোধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অবিলম্বে বৈরিতা অবসানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই ভয়ংকর সংকটের মধ্যে নিপতিত নিরপরাধ শিশু এবং বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা ও কল্যাণের সুরক্ষা দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, দুর্দশাগ্রস্ত জনসাধারণের কাছে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের জীবন রক্ষা, মর্যাদার সুরক্ষা এবং সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করার ওপর আমাদের সম্পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।
ড. ইউনূস আহ্বান জানান, আসুন, আমরা সবাই মানুষের দুর্দশার অবসান ঘটাতে, দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে এবং এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সহায়ক ও অর্থপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করি এবং দ্রুততম সময়ে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় সব আয়োজন সম্পন্ন করি।
এই দিনে এবং এই যুগে আমাদের সবারই সম্মিলিতভাবে এই বোধোদয় হওয়া উচিত যে যুদ্ধ ও রক্তপাত আধুনিক সভ্যতার মূল্যবোধ ও অগ্রগতির সঙ্গে একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। হত্যা ও ধ্বংসের এই অর্থহীন তাণ্ডবলীলা সারা বিশ্ব ব্যথিত হয়ে দেখছে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি, সংহতি, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের একটি ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য কাজ করা এখন আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি।