‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করতে গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও একই চেষ্টা করা হয়েছে। ১০ বছর ধরে একই কায়দায় একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভবিষ্যতে আবারও এভাবে নির্বাচন করার পাঁয়তারা চলছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব অভিযোগ করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকলে এটা সম্ভব নয়। সে কারণে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। যেন সেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। এ কথাগুলো আমাদের দলের পক্ষ থেকে খুব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।’
দেশে ভিন্নমত পোষণের সুযোগ নেই অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ছয় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা-হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। একটা ভয়াবহ অবস্থা, ভিন্নমত পোষণের সুযোগই নেই।’
ফখরুল বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। এ কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবিও জানিয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ জন্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই এখন বিএনপির লক্ষ্য।’
যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে যাঁরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান, সেই সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে আজ যুগপৎ আন্দোলন করছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এখানে বিএনপি ক্ষমতা নিতে চায়—এ কথাটি মুখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে দেশের মানুষের অধিকারকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। যে স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, যে প্রতিশ্রুতি আমরা জনগণকে দিয়েছিলাম, তা পূরণ করতে চাই।’
দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ এনে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে নানা কৌশলে গণমাধ্যমকে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
জামালপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনার কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, শাসকগোষ্ঠীর লোকেরা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব ঘটনা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সেভাবে ফোকাস করা হচ্ছে না।
পুলিশের হেফাজতে একজন কেয়ারটেকার খুন হয়েছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ওই কেয়ারটেকারকে গ্রেপ্তারের পর ১০ দিন ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে সেভাবে আসেনি। পুলিশে হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার পর কীভাবে নির্যাতন করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, এই ঘটনা তার একটা বড় প্রমাণ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান।
অনুষ্ঠানে বিএনপির অন্যান্য নেতার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, নিতাই রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খানম, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাবিব উন নবী খান ও খায়রুল কবির।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।