নিজেদের ১০০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ইউক্রেনের বিপক্ষে খেলবে—ঘোষণাটা আগেই দিয়ে রেখেছিল জার্মান ফুটবল ফেডারেশন (ডিএফবি)। গত রাতে মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচটি খেলেও ফেলেছে জার্মানি।
তবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে মাঠ ছাড়তে পারেননি জশুয়া কিমিখ-আন্তোনিও রুডিগাররা। ঘরের মাঠ ভেসেরস্তাদিওনে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের বিপক্ষে কোনোরকমে হার এড়িয়েছে জার্মানরা। প্রীতি ম্যাচটি ড্র হয়েছে ৩-৩ গোলে।
৮২ মিনিট পর্যন্ত ৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় ১০০০তম ম্যাচে হার প্রায় দেখেই ফেলেছিল জার্মানি। কিন্তু বাকি সময়ে ২ গোল খেয়ে বসে ইউক্রেন। গোল-উৎসবের ম্যাচটি জিতলে না পারলেও চিরস্মরণীয় করে রেখেছে জার্মানি। খোদ জার্মানরাও যে ইউক্রেনের হয়ে গলা ফাটিয়েছে! এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে রুশ আগ্রাসন বন্ধে পুরো বিশ্বকে শান্তি ও সংহতির বার্তা দিয়েছে জার্মানরা।
জার্মানির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টাও তো রাশিয়ারই বিপক্ষে—১৯১২ সালে সুইডেনের স্টোকহামে রুশদের ১৬-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল জার্মানরা। দলটি নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেছে আরও ৪ বছর আগে, ১৯০৮ সালে বাসেলে প্রতিবেশী সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে। ম্যাচটা তারা হেরেছিল ৫-৩ ব্যবধানে।
গার্ড মুলার, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, লোথার ম্যাথাউস, সেপ মায়ার্স, ফ্রিটৎস ওয়াল্টার, কার্ল-হেইঞ্জ রুমিনেগে, মিরোস্লাভ ক্লোসাসহ বহু কিংবদন্তির সূতিকাগার জার্মানি বেশির ভাগ মাইলফলকের ম্যাচে জয় পেয়েছে। দলটি নিজেদের ১০০তম ম্যাচ খেলেছিল ১৯৩৪ সালে লুক্সেমবুর্গের বিপক্ষে, জিতেছে ৯-১ ব্যবধানে। ১৯৫৮ সালে ২৫০তম ম্যাচে ও ১৯৮৪ সালে ৫০০তম ম্যাচে যথাক্রমে আর্জেন্টিনা ও রোমানিয়াকে হারিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। তবে ১০০০তম ম্যাচে জয় পাওয়া হলো না জার্মানদের।
১০০০তম ম্যাচ উপলক্ষে জার্মানদের জন্য বিশেষ জার্সি বানিয়েছিল ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। ফুটবল ফেডারেশনের লোগো সাধারণত জার্সির বুক বরাবর বাঁ পাশে থাকলেও এই বিশেষ জার্সিতে ছিল একদম মাঝখানে। লোগোর নিচে লেখা ছিল ‘১০০০’। যেন ম্যাচটা বুকে ধারণ করে খেলতে নেমেছিলেন কিমিখ-হাভার্টজরা।
খেলোয়াড়দের ম্যাচ জার্সিগুলো এরই মধ্যে নিলামে তোলা হয়েছে। নিলাম চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত হাজারতম ম্যাচে জার্মানির দুই গোলদাতা কিমিখ ও নিকলাস ফুলক্রুগের জার্সি সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে। কিমিখের জার্সি ৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় ও ফুলক্রুগেরটা ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় কিনেছেন দুই ফুটবলপ্রেমী।
এখন পর্যন্ত ১০০০ ম্যাচ খেলে ৫৭৮টিতে জিতেছে জার্মানি, হেরেছে ২১৪টিতে। আর গত রাতের ম্যাচসহ ড্র করেছে ২০৮টিতে। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেল, ইংল্যান্ড, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা হাজার ম্যাচের মাইলফলক ছুঁয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১০৪৩টি ম্যাচ খেলেছে আধুনিক ফুটবলের জনক ইংল্যান্ড। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত খেলেছে ১০৩৮ ম্যাচ। আর ব্রাজিল মাঠে নেমেছে ১০২৩ বার।
ইংল্যান্ড ১০০০তম ম্যাচ খেলেছিল ২০১৯ সালে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে মন্টেনিগ্রোর বিপক্ষে। ম্যাচটা ইংলিশরা জিতেছিল ৭-০ ব্যবধানে। একই বছর আর্জেন্টিনাও এই মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচ খেলেছে। তবে ঘরের মাঠে নয়। ইসরায়েলের তেল আবিবে উরুগুয়ের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টাইনরা। লিওনেল মেসি ও সের্হিও আগুয়েরোর গোলে ২-২-এ ড্র করেছিল লিওনেল স্কালোনির দল।
ব্রাজিল ১০০০তম ম্যাচ খেলেছে ২০২১ সালে, রিও ডি জেনিরোয়। রিওর নাম নিলেই মারাকানা স্টেডিয়ামের ছবি চোখে ভেসে ওঠার কথা। তবে ১০০০তম ম্যাচটা মারাকানায় নয়, রিওরই আরেক ভেন্যু নিলতন সান্তোস স্টেডিয়ামে খেলেছিল ব্রাজিল। চিলির বিপক্ষে কোপা আমেরিকার ম্যাচটি তারা জিতেছিল ১-০ গোলে।