বর্তমান সংঘাতে কূটনীতির কোনো সুযোগ নেই: থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বর্তমান সংঘাতে কূটনীতির কোনো সুযোগ নেই: থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কম্বোডিয়ার সঙ্গে চলমান সংঘাতকে ঘিরে কূটনৈতিক সমাধানের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক ফুয়াংকেতকেও। 

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শান্তি আলোচনার জন্য কম্বোডিয়া ‘প্রস্তুত নয়’ এবং বর্তমান পরিস্থিতি কূটনৈতিক উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করছে না।

সিহাসাক ফুয়াংকেতকেও বলেন, কূটনীতি তখনই কাজ করবে, যখন পরিস্থিতি কূটনীতির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা তৈরি করবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এখন আমাদের কাছে সে ধরনের কোনো জায়গা নেই।

থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য একটি সুস্পষ্ট ‘অঙ্গীকার’ দেখতে চায় ব্যাংকক। তবে সেই অঙ্গীকারের প্রকৃতি কী হতে পারে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

তার ভাষায়, এই মুহূর্তে তারা (কম্বোডিয়া) প্রস্তুত নয়। তারা একদিকে বলছে আলোচনায় রাজি, কিন্তু বাস্তবে তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সিহাসাক আরও বলেন, চলমান সামরিক অভিযান ও সংঘাতে উভয় পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়ছে। তবুও আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি করতে হলে কম্বোডিয়াকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার প্রস্তুতি দেখাতে হবে। আমরা চাই কম্বোডিয়া দেখাক যে তারা তাদের কর্মকাণ্ড থামাতে প্রস্তুত; তারপরই কূটনীতি ও আলোচনার সম্ভাবনা বিবেচনা করা যেতে পারে।

চার মাসের শান্ত অবস্থা ভেঙে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্ত। রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে দুদিনে দুই দেশের অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন কম্বোডিয়ার নাগরিক এবং একজন থাই সেনাসদস্য।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে সীমান্ত এলাকায় থাই বাহিনীর ছোড়া গোলায় দুই বেসামরিক নিহত হন। এতে দুদিনে কম্বোডিয়ায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ছয়ে। থাইল্যান্ডে নিহত হওয়া ব্যক্তি দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য।

এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভুজ থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্তসংশ্লিষ্ট অঞ্চলটি নিয়ে ১১৮ বছর ধরে চলমান বিরোধ নতুন করে দুই দেশের উত্তেজনার কেন্দ্রে। প্রাচীন মন্দির ও ঐতিহাসিক স্থাপনা–সমৃদ্ধ এই অঞ্চল দাবি করে উভয় দেশই। ১৯০৭ সালে ফরাসি উপনিবেশিক প্রশাসন কম্বোডিয়ার মানচিত্রে এলাকাটি অন্তর্ভুক্ত করলে থাইল্যান্ড এর বিরোধিতা করে। ১৯৫৩ সালে স্বাধীনতার পরও কম্বোডিয়া ভূখণ্ডটি নিয়ন্ত্রণে রাখে, আর দুই দেশের সম্পর্ক রয়ে যায় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে।

দীর্ঘ সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে যায়। কিন্তু গত বছর মে থেকে ফের উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের সংঘাতে নিহত হয় দুই দেশের ৪৮ জন নাগরিক, বাস্তুচ্যুত হয় ৩ লাখ মানুষ। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।

রোববার থাইল্যান্ড জাতিসংঘে অভিযোগ জানায় যে, কম্বোডিয়া গোপনে থাই ভূখণ্ডে ল্যান্ডমাইন পেতেছে যাতে থাই ও চীনা নাগরিক আহত হন। তদন্তে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপও চায় দেশটি।

এর কয়েক ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে সি সা কেত প্রদেশের সীমান্তে গুলি ছোড়ে কম্বোডীয় সেনারা। এতে আহত হন দুই থাই সেনা। পাল্টা হিসেবে কম্বোডিয়ার ভেতরে বিমান হামলা চালায় থাই বাহিনী, এর পরই শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ সংঘাত।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS