ভারতের অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনে কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাজ্যের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে ২০২১ সালে নির্বাচিত হন তিনি।
ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের নামে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ায় তাকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই আদালতের রায়ের ভিত্তিতে তিনি ঘোষণা বাস্তবায়ন করেন।
হুমায়ুন অভিযোগ করেন, তাকে বাবরি মসজিদ নির্মাণের কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ দিয়ে ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে এবং অনুষ্ঠান বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ যাতে এ ভিত্তিপ্রস্তর না হয়, সেই উদ্দেশ্যে পথে পুলিশ মোতায়েন ছিল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশনার পরে প্রশাসন সরে যায়। তাই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দিনে বাংলার মুসলিম সমাজ এ ঘটনার জবাব দেবে।
বাবরি মসজিদ ইস্যুতে তিনি আরও বলেন, আমি কোনো অসাংবিধানিক কাজ করছি না। ভারতের সংবিধান প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীকে উপাসনালয় নির্মাণের অধিকার দিয়েছে। কেউ চার্চ বানাতে পারে, কেউ মন্দির বানাতে পারে। আমরাও মুসলিম হিসেবে মসজিদ নির্মাণের অধিকার রাখি। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ এটি বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে।
তার দাবি, ভারতের ১৪৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৪০ কোটি মুসলিম বাস করে। পশ্চিমবঙ্গেও প্রায় সাড়ে ১১ কোটি মানুষের মধ্যে ৪ কোটির বেশি মুসলিম রয়েছে। এত মুসলিম জনসংখ্যা যেখানে, সেখানে একটি বাবরি মসজিদ বানাতে বাধা কেন থাকবে? মসজিদ নির্মাণে আর্থিক সংকট হবে না। বিভিন্ন জেলা থেকে মুসলিমরা সহযোগিতা করছেন। একটি সংস্থা ৮০ কোটি রুপি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হুমায়ুন জানান, তিন কাঠা জমিতে মূল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। আর মসজিদ চত্বরে ২৫ বিঘা জমির ওপর হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, রেস্তোরাঁ, উদ্যান ও হেলিপ্যাড নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি রুপি।
এ অনুষ্ঠান থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ‘বঞ্চনার’ অভিযোগও তোলেন তিনি। তার দাবি, ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুসলিম বিধায়কদের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সম্প্রতি তৃণমূল তাকে বহিষ্কার করলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী ও দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সমালোচনা শুরু করেন।
মুসলিম ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ৭ কোটি ৬৬ লাখ ভোটারের মধ্যে ২ কোটি ৮২ লাখের বেশি মুসলিম ভোটার রয়েছে। ৪২ থেকে ৮২ শতাংশ মুসলিম ভোটারবিশিষ্ট ৯০টি আসনে মুসলিম প্রতিনিধিদের বিজয়ী করে পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, মুসলমানরা যাকে চান, তাকে ভোট দিন। বাকি আসনগুলোতে হিন্দু সমাজ যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি তারা গ্রহণ করবে। মুসলিমরা বিরোধী দলে বসেও নিজেদের অধিকার আদায় করবে।
শনিবার দুপুর ১২টার পর কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দুপুর দেড়টার দিকে মঞ্চ থেকে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে হুমায়ুন কবীর ছাড়াও মুসলিম ধর্মীয় নেতারা, ইমাম ও মুআজ্জিনরা উপস্থিত ছিলেন। বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তরের সময় ‘আল্লাহু আকবর’ ও ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান শোনা যায়।
মসজিদ নির্মাণ উপলক্ষে মুর্শিদাবাদসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কেউ ইট-বালু দান করেন, কেউ অর্থসাহায্য করেন। অনুষ্ঠানস্থল থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন হুমায়ুন কবীর।