গণঅভ্যুত্থানই গণতন্ত্র, ইউনূসের সরকার নির্বাচিত: ফরহাদ মজহার

গণঅভ্যুত্থানই গণতন্ত্র, ইউনূসের সরকার নির্বাচিত: ফরহাদ মজহার

দার্শনিক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, শুধু ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচিত সরকার হয়—এই ধারণা ভুল। গণঅভ্যুত্থানই গণতন্ত্র।ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়ারাই জনগণ। তাদের অভিপ্রায়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে। সুতরাং এটি নির্বাচিত সরকার।

শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে এসব কথা বলেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা শাখা ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে তরুণদের করণীয়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

ফরহাদ মজহার বলেন, চব্বিশে ছাত্র-জনতা-সৈনিকদের গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু ‘ফ্যাসিবাদী সংবিধান’ বহাল থাকায় প্রতিবিপ্লবও হয়ে গেছে। এই সংবিধান না থাকলেও ফরমান দিয়ে দেশ চালানো যায়। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা একের পর এক ভুল করে চলেছে। তাদের প্রথম ভুল, চুপ্পুর কাছে শপথ নেওয়া। এখন তারা মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল করতে চাইছে, এটি আরেকটি ভুল।

তিনি বলেন, মধ্যপন্থা হলো সুবিধাবাদ। তরুণদের রাজনৈতিক দল হতে হবে সব ধরনের ফ্যাসিবাদবিরোধী। এটি শুধু বাঙালি জাতিবাদের বিরোধিতা করবে না, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদসহ সব ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করবে। সব ধরনের পরিচয়বাদী রাজনীতিই হলো ফ্যাসিবাদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দল গড়তে এত মানুষ রক্ত দেয়নি।

ভারত ক্রমাগত উসকানি দিচ্ছে বলে সতর্ক করে ফরহাদ মজহার বলেন, আগামীতে অনেক খারাপ পরিস্থিতি আসছে। নিজেদের মধ্যে হানাহানি, মাঠ দখলের লড়াই বন্ধ না করলে পরাজিত ফ্যাসিবাদীরা দিল্লির সহায়তায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে। ইতোমধ্যে আছিয়া ধর্ষণ ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরাজিত ফ্যাসিবাদের দোসররা ইউনূস সরকারকে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এসব প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা মোকাবিলা করতে হবে।

ফরহাদ মজহার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার নারীর অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, আজ সেই মেয়েরা কোথায়? কেন তাদের আমরা নিরাপত্তা দিতে পারছি না? কেন তাদের রাজনীতির ময়দানে সামনের কাতারে আসার সুযোগ করে দিতে পারছি না? মুহম্মদের (স.) সময় কি নারীরা মসজিদে যায়নি, যুদ্ধ করেনি? তাহলে কেন আজ তাদের আমরা ঘরে বন্দি রাখার চেষ্টায় অবতীর্ণ হই?

‘বিদ্যমান সংবিধান বাংলাদেশের নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, সত্তরের নির্বাচন হয়েছিল পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য। কিন্তু নির্বাচিতরা দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করে। এই ম্যান্ডেট তাদের ছিল না। সেই কারণেই তারা সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের স্থলে ভিন্ন চারটি মূলমন্ত্র হাজির করেছিল। এটি জনগণের অভিপ্রায়ের বিপরীত।

বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন মনোভাব ও সংগ্রামের প্রশংসা করে ফরহাদ মজহার বলেন, বেগম জিয়ার এই অবস্থান ও মনোভাব গণঅভ্যুত্থানকারীদের শক্তি জুগিয়েছে। সেই কারণে বিজয়ী হওয়ার পরপরই তারা প্রথম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেছে। তারেক রহমানসহ বিএনপি-জামায়াতের বহু নেতাকর্মীর নামে থাকা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে। ছাত্রগণঅভ্যুত্থান সফল না হলে এটা হতো না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও আলোচনা করেন লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খান, মোহাম্মদ রোমেল এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS