জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফরে প্রাধান্য পাবে রোহিঙ্গা ইস্যু। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে।এই সফরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
এই সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) চার দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। এই সফরের শিরোনাম ‘রামাদান সলিডারিটি ভিজিট’। রমজান মাস উপলক্ষে সংহতি জানিয়ে এই সফর হলেও প্রাধান্য পাবে রোহিঙ্গা ইস্যু।
এদিকে বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, জাতিসংঘ মহাসচিব বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় ঢাকায় আসবেন। রোববার (১৬ মার্চ) তিনি ফিরে যাবেন।
শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পরে তিনি রোহিঙ্গা শিবিরে চলে যাবেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। প্রধান উপদেষ্টাও এই ইফতারে অংশ নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার জানান, আশা করা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে এক লাখ রোহিঙ্গা ইফতারে যোগ দেবেন।
পরদিন শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া তিনি সেদিন সংবাদ সম্মেলনেও বক্তব্য দেবেন। সেদিনই জাতিসংঘের মহাসচিবের সম্মানে ইফতার ও রাতের খাবারের আয়োজন করছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব যোগ দেবেন।
বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে। তবে কোনোভাবেই এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। জনাকীর্ণ শিবিরে রোহিঙ্গাদের চাকরি বা শিক্ষার সুযোগও সীমিত।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরে বিভিন্ন সময়ে এর সমাধান চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা তহবিলও কমে আসছে। সে কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জটিলতা বাড়ছে।
রয়টার্স জানায়, ২০২৪ সালে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্ষুধার পরিমাণ বাড়তে থাকা এর অন্যতম কারণ ছিল।
এদিকে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর জাতিসংঘে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। এই সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরা হবে।
একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এই সম্মেলন সামনে রেখে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ভালোভাবে অনুধাবন করতে চান জাতিসংঘ মহাসচিব। সে কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর সামনে রেখে সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ঢাকায় এসেছিলেন। আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি নতুন গতি তৈরি করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাও বলবেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান সংস্কার ইস্যু নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সফরকালে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি জানিয়ে রোজা রাখবেন। পবিত্র রমজান মাসে ঢাকায় আসছেন বলেই তিনি সংহতি জানিয়ে রোজা পালন করবেন। গত বছর মিসর ও জর্দান সফর করেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
তখন মুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রোজা রেখেছিলেন তিনি। এবার বাংলাদেশ সফরকালেও জাতিসংঘের মহাসচিব এক দিন রোজা রাখবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব এ সফরে আসছেন।
প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকার ইস্যুবিষয়ক বিশেষ দূত খলিলুর রহমান গত ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অধ্যাপক ইউনূসের পাঠানো আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেছিলেন।