পেশাদারির পরীক্ষা নেবেন হামজা

পেশাদারির পরীক্ষা নেবেন হামজা

মজার এক গল্প দিয়েই শুরু করি। বসুন্ধরা কিংসে খেলতে আসা কোস্টারিকা জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড দানিয়েল কলিন্দ্রেস তার জীবনের অনেক একান্ত গল্পও করত আমার সঙ্গে।এর একটি ছিল কোস্টারিকার জাতীয় দল নিয়ে।

দেশটির জাতীয় দলে মূলত খেলত সে। দেশের ক্লাবে খেলা ফুটবলাররাই, তাদের জন্য ছিল বিমানের ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণের ব্যবস্থা।

কিন্তু গোলরক্ষক কেইলর নাভাস যখন রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন, তখন রিয়াল থেকে দেশটির ফেডারেশনে চিঠি আসে যে নাভাস যেন বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করে। ‘টিম বন্ডিং’ ঠিক রাখতে এর পর থেকে কোস্টারিকা ফেডারেশনও পুরো দলের জন্য বিজনেস ক্লাসের টিকিট কাটতে বাধ্য হয়। একটি উঁচু মানের দলের শীর্ষ খেলোয়াড়কে জাতীয় দলে খেলাতে গেলে তার জন্য সুযোগ-সুবিধাও একই পর্যায়ের রাখতে হয়। কারণ ফুটবলজগতে খেলোয়াড়রা শুধু ক্লাবের, ধারে খেলতে দেয় জাতীয় দলকে।

হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ফুটবলে এক বিশাল প্রাপ্তি। এ জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বাহবা প্রাপ্য। কিন্তু বাফুফে নিজেও জানে না, এর মাধ্যমে কত বড় ‘ফাঁদে’ তারা পা দিল। ফুটবলবিশ্বের সেরা লিগ এবং সবচেয়ে পেশাদার দেশে বড় হওয়া এক ফুটবলারকে খেলাতে গেলে আপনার কাজকর্ম হতে হবে পুরোদস্তুর পেশাদার।

বাফুফের এখন সেই সুযোগ নেই যে লেস্টার সিটির কোচ রুড ফন নিস্টলরয়কে চিঠি লিখবে যে, ‘দেশের স্বার্থে’ লেস্টার সিটির খেলা বাদ দিয়ে হামজাকে ২০ দিন আগে জাতীয় দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হোক।

বাজে মাঠে খেলে ইনজুরির ঝুঁকিও হামজা নেবেন না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড একবার প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে মাঠে ৭ রকমের ঘাস দেখে ম্যাচই বাতিল করে দেয়। সেই পর্যায়ে খেলা ফুটবলারই কিন্তু হামজা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম কি আদৌ প্রস্তুত হামজাকে খেলানোর জন্য? 

যদি স্প্রিংকলারের জায়গায় বসানো ওয়াটার গানে গিয়ে ধাক্কা খান হামজা, তাহলে ক্রীড়া পরিষদ কি এর দায়ভার নেবে? হামজা যদি এসে দেখেন জাতীয় দলের মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট রুমই নেই, তাহলে তিনি পরেরবার আসবেন কি না সন্দেহ!

হামজার আবির্ভাব দেশ-বিদেশের জনস্রোতও নিয়ে আসবে। এর সঙ্গে আসবে পৃষ্ঠপোষকতাও। যেসব কোম্পানি আসবে, তারা বাফুফের প্রাতিষ্ঠানিক সুনামের খোঁজখবরও নেবে। কোনো কোম্পানির সঙ্গেই কাজের ক্ষেত্রে বাফুফের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা ভালো নয়। বাফুফে যদি স্পনসরদের চাহিদা বুঝে পদক্ষেপ নিতে পারে, তাহলে খুবই ভালো। নয়তো বিদেশি বড় কোম্পানির সঙ্গে দ্বন্দ্ব মানে সারা বিশ্বেই আপনার বদনাম রটে যাবে। আসবে বড় বড় মিডিয়া হাউজ যেমন—বিবিসি, ডেইলি মেইল, দ্য মিরর বা দ্য সান। এসব মিডিয়া আপনি কিভাবে সামলাবেন, সেটিও দেখার বিষয়।

হামজার মতো উঁচুমানের খেলোয়াড়কে সামলানোর মতো পেশাদার এখনো বাফুফে নয়। হুট করে এত বড় বদলে অভ্যস্ত হওয়ার কাঠামো বাফুফের নেই। এজন্য উল্লসিত হওয়ার পাশাপাশি কপালে চিন্তার ভাঁজও পড়া উচিত। সত্যিকারের পেশাদারির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাফুফে। এটা সুখকর স্মৃতি হবে না ফাঁদ, আগামী দিনে বাফুফের কর্মকাণ্ডই তা বলে দেবে।

লেখক : বসুন্ধরা কিংসের মার্কেটিং ও মিডিয়া ম্যানেজার

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS