উত্তর কোরিয়ার সেনাদের রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য ভুয়া সামরিক নথি দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের রুশ নাম ও জন্মস্থান উল্লেখ করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী এমনটি বলেছে।
কিয়েভ আগে থেকেই দাবি করে আসছিল, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে বিদেশি যোদ্ধাদের উপস্থিতি গোপন করার চেষ্টা করছে। খবর সিএনএনের।
ইউক্রেনের বিশেষ আভিযানিক বাহিনী এক বিবৃতিতে রোববার বলেছে, তারা উত্তর কোরিয়ার তিন সেনাকে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলে হত্যা করেছে। তাদের নথিও জব্দ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের সামরিক পরিচয়পত্রে সব ধরনের সিলমোহর ও ছবি অনুপস্থিত, বাবার নামের উল্লেখ রুশ প্রথায় করা হয়েছে এবং জন্মস্থান হিসেবে সাইবেরিয়ার দক্ষিণে মঙ্গোলিয়ার সীমান্তবর্তী রুশ অঞ্চল তুভা প্রজাতন্ত্রের নাম লেখা হয়েছে।
তবে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সামরিক নথিগুলোতে সই কোরিয়ান ভাষায় রয়েছে, যা এ সৈন্যদের প্রকৃত উৎসের ইঙ্গিত দেয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এ ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে তার ক্ষয়ক্ষতি লুকাতে এবং বিদেশি উপস্থিতি গোপন করতে সম্ভাব্য সব পদ্ধতি অবলম্বন করছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুমান অনুযায়ী, রাশিয়ায় বর্তমানে ১১ থেকে ১২ হাজার উত্তর কোরীয় সেনা রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু সেনা ইতোমধ্যে রুশ বাহিনীর সঙ্গে মিলে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, বিশেষ করে আগস্ট মাসে ইউক্রেনীয় আক্রমণে দখলকৃত কুরস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মতে, উত্তর কোরিয়ার সেনারা ওই অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। কিয়েভের কর্মকর্তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের সম্পৃক্ততা ঢাকতে চেষ্টা করার অভিযোগ তুলেছেন।
জ্যেষ্ঠ এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কুরস্কে উত্তর কোরীয় কয়েকশ সেনা হতাহতের শিকার হয়েছেন। এদিকে দক্ষিণ দক্ষিণ কোরিয়ার এক আইনপ্রণেতা তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে জানান, কুরস্কে প্রায় ১০০ জন উত্তর কোরীয় সেনা নিহত এবং প্রায় এক হাজার সেনা আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের ওই বিশেষ বাহিনী ১৭ ডিসেম্বর জানায়, মাত্র তিন দিনে কুরস্কে রুশ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার সময় ৫০ জন উত্তর কোরীয় সেনা নিহত এবং ৪৭ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনীয় একটি ইউনিট জানায়, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের পোশাক রুশদের থেকে আলাদা। তারা পায়ে হেঁটে আক্রমণ চালিয়েছে, যা ৭০ বছর আগের কৌশলের মতো। এটি সম্ভবত কোরিয়ান যুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত করে, যেখানে ঢেউয়ের মতো একের পর এক পদাতিক বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছিল।
মস্কো বা পিয়ংইয়ং কেউই রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার সেনাদের উপস্থিতি আনুষ্ঠানিকভাবে কখনও স্বীকার করেনি।