রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে ওকালতনামা না থাকায় তার আগাম জামিনের শুনানির অনুমতি চেয়ে করা পুনঃআবেদন নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) অবকাশকালীন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন।এর আগে একই আদালতে কোনো ওকালতনামা না দাখিল না করায় গতকাল বুধবারও (১১ ডিসেম্বর) শুনানির আবেদন নাকচ করে দেন আদালত।
আবেদনের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ ঢাকা থেকে এসেছিলেন চিন্ময়ের জামিন শুনানির জন্য।গতকাল (বুধবার) ওকালতনামা ছাড়া একটি দরখাস্ত দিয়েছিলেন। ওকালতনামা ছাড়া জামিন শুনানি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, গতকাল দরখাস্তটি নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (আজ) সকালে আদালতে এসেছিলেন অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ। আদালত তখন বলেন, চট্টগ্রাম বারের একজন অ্যাডভোকেটের ওকালতনামা নিয়ে আসেন, আমি শুনানি করব। আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনবার আদালত সময় দিয়েছেন তাকে। কিন্তু তিনি কোনো ওকালতনামাসহ আইনজীবী উপস্থিত করতে পারেননি। আদালত আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যেসব আবেদন করা হয়েছে, সবগুলো নথিভুক্ত করে আগামী ২ জানুয়ারি ধার্য তারিখে শুনানির জন্য রেখেছেন।
তিনি বলেন, দেশের বিদ্যমান আইনের বাইরে সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ নেই। একটি বারে দরখাস্ত শুনানি করতে আসবেন, ওই বারের ওকালতনামা লাগবে। এটা আমাদের বিধান। ওই বারের ওকালতনামা না দিয়ে জামিন শুনানি করবেন, তাহলে তা বেআইনি ও নিয়মের বাইরে হবে। আদালত রবীন্দ্র ঘোষ সাহেবকে এই কথা বলেছেন। সুমিত আচার্য্যকে ওকালতনামার কথা বলেছিলেন, ওনাকে ডেকে আনা হয়েছে। কিন্তু তিনি ওকালতনামা দিতে রাজি হননি।
জামিন আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি রবীন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, আজকে মুভ (লড়তে) করেছিলাম। আরেকটা লয়ার না থাকার কারণে (এই বারের)। এটা পেন্ডিং রেখে দিয়েছেন। এটা যদি রিজেক্ট হয় হাইকোর্টে যাব।
এসময় তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমাকে ফিজিক্যালে নয়, মানসিক হেনস্তা করা হয়েছে। ’
যদিও তার এ অভিযোগ নাকচ করে দেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, রবীন্দ্র ঘোষকে কোনো ধরনের শারীরিক হেনস্তা করা হয়নি। এখন তিনি মানসিক হেনস্তার কথা বলেন। আমরা যখন আদালতে মুভ করি, দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কথা-বার্তা বলার সময় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়ে থাকে। এটাকে যদি মানসিক চাপ বলে থাকেন, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। কারণ এটা দেশের প্রত্যেক কোর্টে হয়ে থাকে। বিশেষ করে নিম্ন আদালতে হয়।
এর আগ গত বুধবার আগাম জামিনের শুনানির বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মফিজুল হক ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ আগাম জামিন শুনানির আবেদন করার জন্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর পক্ষে মামলা লড়ার কোনো ওকালতনামা দেননি। এছাড়া চিন্ময়ের পক্ষে ওকালতনামা থাকা আইনজীবী শুভাশিস শর্মা উপস্থিত ছিলেন না। পরে আদালত আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের করা আবেদন নাকচ করে দেন।
ইসকনের ডাকে সমাবেশের দিন জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে গত ৩১ অক্টোবর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালী থানায় মামলা করা হয়। ২৬ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ৩ ডিসেম্বর জামিন শুনানির দিন থাকলেও কোনো আইনজীবী না থাকায় শুনানির দিন আগামী ২ জানুয়ারি ধার্য রয়েছে।