সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ার কারণে ৪৬ পুলিশ কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়। শোকজপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এর জবাব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে জমা দেন।
ডিএমপি সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, শোকজের জবাব পুলিশ কমিশনারের মনপুত হয়নি। পরবর্তীতে চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই ৪৬ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। বদলিকৃত কর্মস্থল বেশিরভাগের ঢাকার বাইরে। বদলি হওয়া অনেক কর্মকর্তা এখনো তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। এসব কর্মকর্তাকে আগামী ১৪ মে’র মধ্যে বদলি করা কর্মস্থলে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর করা এক নির্দেশনায় এই ৪৬ কর্মকর্তাকে আগামী তিন দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে যোগদান না করলে, তাদেরকে পুলিশ বিভাগ থেকে অবমুক্ত করে দেয়া হবে অর্থাৎ চাকরিচ্যুতির নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের সেই নির্দেশের কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এতে বলা হয়, ‘পুলিশ সদরদপ্তর থেকে বিভিন্ন আদেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সহকারী পুলিশ সুপার কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটে বদলি করা হয়। বদলি হওয়া এসব কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগদান না করায় প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচনী তফসিলবহির্ভূত এলাকার ক্ষেত্রে বদলি করা কর্মকর্তাদের ১৪ মে’র মধ্যে বদলি করা কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্ব অর্পণের নির্দেশনা দেওয়া হলো। অন্যথায় ১৫ মে থেকে এসব কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন।’
এদিকে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে গত সপ্তাহে ক্রাইম ডিভিশনের ৮ জন উপকমিশনার (ডিসি) ও গোয়েন্দা বিভাগের ৮ জন উপকমিশনারের কাছে একটি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। এই সতর্কবার্তার অনুলিপি পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ যাতে বাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করে সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের অনেক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদেরকে মৌখিক সতর্ক করে বলেছেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তাদেরকে নানান বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হবে।
ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গেও কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যেও এই নিয়ে নানান ধরনের আলাপ আলোচনা রয়েছে। অনেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিষয়টি সবাইকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।
ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, যারা ওই অনুষ্ঠানে আসেননি তারা ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশ অমান্য করেছেন। আবার বদলি করার পর কর্মস্থলে যোগদান না করে এক ধরনের ধৃষ্টতা প্রকাশ পেয়েছে। যেহেতু পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে ইউনিটের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা যখন অধীনস্তকে কোনো বিষয়ে অবগত করেন, সেটা নির্দেশ হয়ে যায়। সেই নির্দেশ না মানা হলে, সেটা ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙ্গে ফেলার সামিল হয়। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়াটা যৌক্তিক। যদি তারা এই নির্দেশ না মানেন, তাহলে তো তাদের এই বাহিনীতে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরের পরের দিন ২৩ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের আমন্ত্রণে রাজারবাগে পুলিশ অডিটোরিয়ামে ঈদপরবর্তী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ পুলিশের আরও অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে ফাঁকা অডিটোরিয়াম দেখে অতিথিদের সামনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন ডিএমপি কমিশনার। এক পর্যায়ে তিনি খোঁজ নেওয়া শুরু করেন কোন কোন কর্মকর্তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। আর কেন তারা উপস্থিত হননি, সেই ব্যাখ্যা তলবেরও নির্দেশ দেন তিনি। এরপর পরই অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ও সহকারী কমিশনার (এসি) মর্যাদার ৪৬ কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়।