সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে থাকা দেয়াল, পোস্টার ও ঘটনাস্থল দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি আশুলিয়া থানার সামনের ভিডিও।
ভিডিওতে লাশের স্তূপ করা এক পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। তিনি হলেন – ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। প্রায় দুই বছর আগে ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন তিনি।
এদিকে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি। তার মোবাইলফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে ঘটনাস্থলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যায়।
এর আগে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সারাদিন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
আর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে আরাফাত হোসেন ফোন বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তবে ভিডিওতে থাকা অপর পুলিশ সদস্যের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুইজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা ধরে ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন তারা। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা মেলে।
ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে।
ঘটনাস্থল চিহ্নিত করতে আশুলিয়া থানার সামনে যায় বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের প্রতিনিধি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়া প্রেসক্লাবের পেছনের সড়ক দিয়ে থানা রোড অতিক্রম করে এসবি অফিসের দিকে যাওয়ার সময় ডান পাশের দেয়ালটি হুবহু ভিডিওর সাথে মিলে যায়। এমনকি এখনও দেয়ালে পোস্টারটিও রয়েছে। মহাসড়ক থেকে থানার দিকে অগ্রসর হয়ে এসবি অফিসের দিকে চৌরাস্তায় এই ঘটনা ঘটেছে। ভেতরে ভিডিওতে থাকা বালুভর্তি বস্তাগুলো এসবি অফিসের দিকে যেতে থাকা ভবনের সামনে স্তূপ করা ছিল। কিন্তু থানা পরিষ্কারের সময় সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আরাফাত ও ইমন নামের দুই যুবক বাংলানিউজকে জানান, একটি ড্রোন উড়িয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। তবে সেটি পুলিশের ড্রোন কি না তা জানি না। থানার বিভিন্ন গলিতে ছাত্র-জনতা প্রবেশ করলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পুলিশ। এসময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হলে পুলিশ তাদের থানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে একটি পুলিশভ্যানে লাশগুলো রেখে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, আরাফাতের ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর আরাফাত ভেঙে পড়েছেন।
তিনি কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরাফাত এখনও অফিসে আসেননি। আমরা সেদিন ছাত্র-জনতার দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়িনি যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা সেদিন ‘ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আব্দুল্লাহিল কাফী’র নির্দেশনা পালন করেছি।
এব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আজ সকালে ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে। আপনারা যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করেন, কোনো তথ্য কিংবা সূত্র পেলে আমাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা গত ৫ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। পরে হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হয়। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এঘটনায় ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ১৫ জনের মৃত্যু হয় (ভ্যানে তোলা লাশের হিসাব বাদে)।