আপনি যত ব্যস্তই থাকুন না কেন মাঝে মাঝে দূরে কোথাও চলে যান। দেশের কোনো দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করে আসুন। মন ভালো হবে। কাজে কর্মে প্রশান্তি দেখা দিবে। একা ভ্রমণে কোনো আনন্দ নাই। তাই দলগত ভাবে ভ্রমণ করুন। বেশী আনন্দ পাবেন।
কর্মব্যস্ত সময় কাটানোর পর অনেকেই চান বিরতি। ছুটির দিনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোথাও বেরিয়ে আসার সুযোগ খোঁজেন অনেকে। কিন্তু শহরের ভিড় আর হট্টগোলের ভেতর বেড়ানোর প্রশান্তিটা আর মেলে কোথায়! শহর ছেড়ে দূরে কোথাও যাবেন, সে সময়টাও তো নেই, কারণ ছুটি হয়তো মাত্র একদিন অথবা ২ দিনের এই সময়ের মধ্যেই চলুন ঘুরে আসি।
ঘুরে আসতে পারেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নে অবস্থিত বালিয়াটি জমিদারবাড়ি থেকে। আর সে সঙ্গে দেখে আসতে পারেন পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারবেন। তো, আর দেরি কেন, দুই জমিদারবাড়ি থেকে।
ঢাকা থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার গেলেই দুটো সুন্দর জমিদারবাড়ি দেখতে পাবেন। একটি হলো বালিয়াটি, আরেকটি পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় বিকেলের মধ্যেই দুটি জমিদারবাড়ি দেখা শেষ করে রাতে ঢাকা ফিরতে পারবেন।
জমিদারবাড়ির ভগ্ন স্তূপের মাঝে লুকিয়ে আছে কত ইতিহাস, কত আনন্দ, কত বেদনা। একটা সময় জমিদারদের এসব বিশাল ভবন ভরে থাকত জৌলুসে, নাচমহল রিনরিন শব্দে মাতাল হয়ে উঠত রাত বাড়লে। কত মানুষের আনাগোনা ছিল তখন। এমনকি ইংরেজ শাসকরাও মাঝেমধ্যে জমিদারবাড়িগুলোতে ঢুঁ মারতেন। এখন তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। আছে শুধু সেসবের স্মৃতিবহনকারী কিছু ভবন।
বালিয়াটি জমিদারবাড়ি : বালিয়াটি জমিদারবাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের উনিশ শতকে নির্মিত অন্যতম প্রাসাদ। মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে এই জমিদারবাড়ি অবস্থিত। ভবনগুলো সব দক্ষিণমুখী। মোট ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার জমির ওপর এ ভনবগুলো প্রতিষ্ঠিত। পেছনে রয়েছে একটি বড় পুকুর। পুরো জমিদারবাড়িটি এখনো সুন্দরভাবে সংরক্ষিত করা আছে। ‘গোবিন্দ রাম সাহা’ বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাড়িগুলো করা শুরু করেন এবং পরে তাঁর বংশধররা এগুলো আরো বিস্তার করেন। সামনের দিকের চারটি প্রসাদ ব্যবহৃত হতো অফিস হিসেবে আর পেছনেরগুলোকে বলা হতো অন্দরমহল, যাতে জমিদার এবং তাঁর পরিবাররা বসবাস করতেন।
বর্তমানে এ ভবনগুলো সরকারিভাবে যত্ন করে রাখা হয়েছে। একটি ভবনকে করা হয়েছে জাদুঘর। সেখানে জমিদারদের ব্যবহার্য নানা রকম জিনিস আছে। একটি রুমে রাখা আছে জমিদারদের অনেক সিন্দুক। ভেবে রোমাঞ্চিত হবেন, একসময় এসব সিন্দুক ভরা থাকত টাকাপয়সা আর সোনাদানায়। নাচঘরটিও দেখার মতো। ঘরটির চারদিকে অলংকরণ করা। এ জমিদারবাড়িতে ঢুকতে জনপ্রতি ২০ টাকা দিতে হয়, বিদেশিদের জন্য ২০০ টাকা। রোববার সরকারি ছুটি।
পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি : বালিয়াটির ঠিক নয় কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি। কলকাতা ভিক্টোরিয়া প্যালেস, ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক সৌন্দর্যের মিশেলে ১৯১৫ সালে গড়া তিন ভাই ব্রজেন্দ্র-উপেন্দ্র-যোগেন্দ্র মোহন তৈরি করেছিলেন এ বাড়িগুলো। বালিয়াটির মতো যত্ন নেই এ জমিদারবাড়ির। তবে এখনো গেলে এর সৌন্দর্যের আঁচ পাওয়া যায়। যেকোনো একটা ছুটির দিন ঘুরে আসতে পারেন এ জমিদারবাড়ি দুটি।
প্রাইভেটকারে করে যেতে পারেন। ঢাকা-আরিচা সড়কের কালামপুর দিয়ে হাতের ডানের রোড দিয়ে ঢুকে ভেতরের দিকে গেলেই পড়বে সাটুরিয়া। এর পর আবার ডানে ২ কিলোমিটার গেলেই বালিয়াটি জমিদারবাড়ি। যাঁরা বাসে যাবেন, তাঁরা গাবতলী থেকে এসবি লিংক বাসে করে যাবেন সাটুরিয়া। এরপর রিকশায় বালিয়াটি।
বালিয়াটি শেষ করে অটোতে করে চলে যান পাকুটিয়া। সেখানকার বাজারের রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে জমিদারবাড়ি দেখে পাকুটিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠে ঢাকা। সময় লাগবে প্রায় তিন ঘণ্টা।
একটা পিকনিক মুড নিয়েই জমিদার বাড়ি দুটি দেখতে যেতে পারেন। সমমনা কয়েকটি পরিবার মিলে যাত্রার আয়োজন করলে মন্দ হয় না। ১৫/২০ জনের একটি দল গঠন করলেন। সাথে নিলেন কিছু রান্না করা খাবার। এক বা একাধিক গাড়িতে চড়ে চলে যান দুই জমিদার বাড়িতে। সাথে ক্যামেরা নিতে ভুলে যাবেন না। জমিদার বাড়ির সামনে ছবি তুলে রাখুন। এই ছবিই একদিন ইতিহাস হয়ে ধরা দিবে। ও হ্যা, ভ্রমণের সময় বিশুদ্ধ পানি, প্রয়োজনীয় ঔষধ অবশ্যই সাথে রাখবেন। আপনার ভ্রমণ সুন্দর ও সার্থক হোক এটাই শুভ কামনা।