কাকতালীয়ভাবে এর আগে দেখা গেছে ভারতের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (লোকসভা ভোট) শেষ বেলার ভোট পড়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কলকাতায়। অর্থাৎ যে আসনে ভোট দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এবারও তার ব্যতিক্রম হল না।
শনিবার (১ জুন) ছিল চলতি নির্বাচনের সপ্তম অর্থাৎ শেষ ধাপের নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে একেবারে শেষ বেলায় ভোট দিলেন বাংলার দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এদিন ব্যতিক্রম একটাই। ভোট দেওয়ার পর কোনো বক্তব্য রাখলেন না নেত্রী। যা কোনোবার তিনি করেন না। এবারই প্রথম। এদিন শরীরের ভাষাও ছিল যেন ক্লান্ত বা কোথাও যেন বিঘ্নিত।
তার কেন্দ্র দক্ষিণ কলতাকাতার ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশন স্কুলে ভোট দিতে গেলেন স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩৬ মিনিটে। সর্বোচ্চ সাত মিনিটের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করলেন। বের হয়ে মাত্র ৩০ সেকেন্ড জনগণের উদ্দেশ্যে ডান হাতের দুই আঙুল তুলে ভিকটরি চিহ্ন দেখালেন। এরপর সোজা গাড়িতে উঠে চলে গেলেন।
তবে গাড়িতে বসেই তার অগুন্তি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে সমর্থন কুড়োলেন। এর বাইরে বাংলার অগ্নিকন্যা খ্যাত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো কিছুই নজরে পড়ল না এদিন।
অপরদিকে ভোট শেষ হতেই সন্ধ্যা সাতটা থেকেই জনমত সমীক্ষাগুলো শাসক দল তৃণমূলকে মোটেই সন্তুষ্ট করতে পারছে না।
ভারতের ৫৪৩ আসনের মধ্যে বাংলার ৪২ লোকসভা আসনের জনমত সমীক্ষা বলছে, রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে তৃণমূল পেতে পারে ১৩- ১৭ আসন। বিজেপি পেতে পারে ২৩- ২৭ আসন। বাম এবং কংগ্রেস পেতে পারে ১-৩ আসন।
এখানেই শেষ নয়, ভোট শতাংশে বাংলায় তৃণমূল পেতে পারে ৪১ দশমিক পাঁচ শতাংশ। বিজেপি পেতে পারে ৪২ দশমিক পাঁচ শতাংশ। সিপিআইএম এবং কংগ্রেস জোট পেতে পারে ১৩.২ শতাংশ এবং অন্যান্যরা পেতে পারে ২.৮ শতাংশ ভোট।
এছাড়া ভারতের প্রথমসারির সমীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিতে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে বলে জানান দিচ্ছে। কেন্দ্রের নিরিখে এগিয়ে রেখেছে বিজেপিকে।
‘নিউজ নেশন’ জানাচ্ছে বিজেপি পেতে পারে ৩৪২ থেকে ৩৭৮ আসন। ইন্ডিয়া জোট খেতে পারে ১৫৩ থেকে ১৭৯ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ২১ থেকে ২৩ টি আসন।
‘ম্যাটরিজ’ এর মতো সমীক্ষা বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৩৫৩ থেকে ৩৯২ আসন। ইন্ডিয়া জোট খেতে পারে ১৪১ থেকে ১৬১ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ১০ থেকে ২০টি আসন।
‘জন কি বাত’ সমীক্ষা বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৩৬২ থেকে ৩৬৮ আসন। ইন্ডিয়া জোট খেতে পারে ১১৮ থেকে ১৩৩ আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ৪৩ থেকে ৪৮টি আসন।
যদিও জনমত সমীক্ষা শেষ কথা বলে না।
ভোটের ফলাফল ৪ জুন। তখনই জানা যাবে ভারতসহ পশ্চিমবঙ্গে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসছে।
গত লোকসভা নির্বাচনে(২০১৯) পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ২২ আসন। বিজেপি ১৮ এবং বাম কংগ্রেস জোট পেয়েছিল দুটি আসন। অপরদিকে গত নির্বাচনে গোটা ভারতে বিজেপি একক ক্ষমতায় পেয়েছিল ৩০৩ আসন এবং বিজেপি জোট এনডিএ পেয়েছিল ৩৫২ আসন।
যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট এদিন দাবি করেছে, ইন্ডিয়া জোট অন্তত ২৯৫টি আসনে জয়ী হতে চলেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে নেতৃত্বে শনিবার তার দিল্লি বাসভবনে জোটের নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। যদিও বৈঠকে মমতা থাকতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল।
এদিন আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে কংগ্রেস সভাপতি ইন্ডিয়া জোটের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, বুথ ফেরত সমীক্ষায় যাই বলা হোক না কেন, তা নিয়ে বিচলিত বা গুরুত্ব না দিয়ে গণনার দিন মাটি কামড়ে থাকুন। গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই থামবে না। প্রসঙ্গত, দেশটির ৫৪৩ আসনে সরকার গড়তে মধ্যে প্রয়োজন ২৭২ আসন।
এদিকে শনিবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বাংলায় গড় ভোটের হার ৬৯.৮৯ শতাংশ। তার পরেও আরও একঘণ্টা ভোট ছিল। ফলে সর্বশেষ ভোটের হার আরও কয়েক শতাংশ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রথম ছয় ধাপের তুলনায় রাজ্যের সপ্তম ধাপের ভোটও ছিল ঘটনাবহুল। বাংলার নয়টি আসনে এদিন অশান্তির খবর সামনে এসেছে। আইএসঅফ ও তৃণমূলের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভাঙড়। বেলা গড়ানোর সঙ্গে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় বসিরহাট কেন্দ্রের সন্দেশখালিতে। এছাড়াও উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, দমদম, বারাসত, ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর ও জয়নগর সকাল থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে অশান্তির খবর সামনে আসে।
ভারতের শেষ ধাপে ভোট হয়েছে ৭টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ৫৭টি লোকসভা আসনে। পশ্চিমবঙ্গে বারাসাত, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবার, দমদম, জয়নগর, যাদবপুর, মথুরাপুর, দক্ষিণ কলকাতা ও উত্তর কলকাতা – এই নয় আসনে শেষ ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের ৯ আসনের পাশাপাশি ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে উত্তরপ্রদেশের ১৩ আসন, পাঞ্জাব ১৩, বিহার ৮, ওড়িশা ৬, হিমাচল প্রদেশ ৪, ঝাড়খন্ড ৩ এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল চন্ডিগড়ের ১ আসনে। সব মিলিয়ে এই পর্বে দেশটির ৯০৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করছেন ১০ কোটি ৬ লাখ ভোটর।