নিজস্ব প্রযুক্তিতে ড্রোন নির্মাণে ব্যাপক অগ্রসর হয়েছে ইরান। সম্প্রতি নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব ড্রোন সরবরাহ করছে দেশটি। আশেপাশের কোনোকিছুর ক্ষতি না করেই নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে ইরানের এসব ড্রোন। দামে সস্তা হওয়ায় এসব ড্রোন কিনতে চাইছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সমরাস্ত্র নির্মাণে ইরানের এমন সাফল্যে হতবাক পশ্চিমারা।
ইসলামী বিপ্লবের পর থেকেই নিজস্ব অস্ত্র খাতে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পরাশক্তি ইরান। আশির দশক থেকেই ড্রোন তৈরিতে বিশেষ মনোযোগ দেয় দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের শত্রু ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন শিল্পকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ইরানের সামরিক বাহিনী।
তবে, ড্রোন নির্মাণে ইরানের আসল যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের পর থেকে। এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেসময় মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা কোম্পানি লকইডেরে একটি গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান।
ভূপাতিত করা ওই ড্রোন থেকে ড্রোন নির্মাণের প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা নেয় ইরানের প্রকৌশলীরা। এর পর প্রথমে একটি সিমোর্গ ড্রোন তৈরি করে ইরান। তার পর শাহেদ-১২৯ এবং পরে শাহেদ-১৩৬ ড্রোন নির্মাণ করেন দেশটির বিজ্ঞানীরা।
ধীরে ধীরে নিজস্ব ডিজাইনেও ড্রোন তৈরি শুরু করে ইরানের প্রকৌশলীরা। গেল সপ্তাহে মিরাজ-৫৩২ নামের নতুন একটি আত্মঘাতী ড্রোনের সফল পরীক্ষা চালায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড।
অন্যান্য দেশের ড্রোন থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের জন্য খ্যাতি পেয়েছে ইরানের ড্রোনগুলো। শাহেদ ১৩৬-এর প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো এটি বিস্ফোরক নিয়ে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে নিজেই বিস্ফোরিত হয়। এতে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে প্রতিপক্ষের বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেলক্ষেত্র ও গ্যাসক্ষেত্রের মতো স্থাপনায় নিখুঁত হামলা চালানো যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেক দেশ প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে ইরানি ড্রোন কিনছে। আফগানিস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিস্তান ও কাজখস্তানের মতো দেশগুলোও ইরানি ড্রোনের প্রধান ক্রেতা। ইউক্রেনেও ইরানের ড্রোনের সফল ব্যবহার করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
নিজেদের ড্রোন সক্ষমতার জানান দিতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার ড্রোন মহড়াও চালিয়েছে ইরান। ইরানের ড্রোন নির্মাণ নিয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যদিও পশ্চিমাদের সব হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে ড্রোন নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে ইরান।