কখনও ক্যাচ মিস, কখনো খুবই বাজে রিভিউ। পুরো দিনটিই বাংলাদেশের জন্য কাটলো এমন।মাঝে উইকেটও এলো অবশ্য। তবুও স্বস্তি খুব একটা মিললো না। শরীরী ভাষা, মনোবলে ঘাটতি স্পষ্ট হলো। বাংলাদেশের জন্য লম্বা কদিন অপেক্ষা করছে কি না, প্রথম দিনশেষেই আসছে এমন প্রশ্নও।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষটিতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। প্রথম দিনশেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান করেছে সফরকারীরা। দিনেশ চান্দিমাল ৫৮ বলে ৩৪ ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ২৬ বলে ১৩ রানে অপরাজিত আছেন।
দুই দলই একাদশে বদল এনে খেলতে নামে ম্যাচটি। সাকিব আল হাসান ফেরেন, হাসান মাহমুদের অভিষেক হয়। একাদশ থেকে বাদ পড়েন শরিফুল ইসলাম ও নাহিদ রানা। শ্রীলঙ্কার একাদশে কাসুন রাজিথার ইনজুরিতে সুযোগ পান আসিথা ফার্নান্দো। বাংলাদেশের তিন স্পিনারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কা তিন পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছে।
বাংলাদেশ শুরুটা করে দুই পেসারকে দিয়ে। একপাশ থেকে দারুণ বল করতে থাকেন হাসান মাহমুদ। তিনি তৈরি করেন সুযোগও। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলটি কিছুক্ষণ হাওয়ায় ভেসেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় স্লিপ অবধি বল ক্যারি করেনি।
ওই ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে ক্যাচ দেন নিশান মাদুশকা। হাসান মাহমুদের অফ স্টাম্পের বাইরের বল কীভাবে খেলবেন, বুঝতে পারছিলেন না তিনি। কিন্তু স্লিপে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন জয়। শুরুর চাপ উবে যায় যেন মুহূর্তেই।
পরে হাসান মাহমুদের বলেই করুণারত্নের ক্যাচ নেওয়ার সুযোগ ছিল সাকিবের জন্য। কিন্তু তিনি সেটি নিতে পারেননি। ফলে হতাশা বাড়ে বাংলাদেশের জন্য। পরে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মাদুশকা। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিতে থাকেন দিমুথ করুণরাত্নেও।
প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে ৮৮ রান তোলে পুরো নিয়ন্ত্রণে ছিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের জন্য ছিল কেবল ক্যাচ ছাড়ার হতাশা। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে সেটি অবশ্য কিছুটা কাটে হাসান মাহমুদের করা রান আউটে।
দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় ওভারে আউট হয়ে যান মাদুশকা। কাভারে ফেলে এক রান স্বাচ্ছন্দ্যেই হয়। দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড়ে মাঝ ক্রিজ থেকে ফিরে আসতে হয় মাদুশকাকে। ডাইভ দিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি, হাসান মাহমুদের থ্রো ধরে স্টাম্প ভাঙেন লিটন। মাদুশকার ১০৫ বলের ইনিংস শেষ হয় ৫৭ রানে।
কিন্তু ওই রান আউটও চাপে ফেলতে পারেনি শ্রীলঙ্কাকে। উল্টো যত সময় যায়, ততই উইকেট নিতে না পারার হতাশা বাড়ে বাংলাদেশের। এর প্রকাশই যেন হয় তাইজুলের করা ৪৪তম ওভারে শান্তর নেওয়া রিভিউতে। কুশল মেন্ডিসের মাঝ ব্যাটে লাগা বলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ।
সেশন এগোনোর সঙ্গে বোলারদের উইকেট নিতে না পারা নিয়ে আফসোস বাড়ছিল। তবে ওখানেই স্বস্তি এনে দেন হাসান মাহমুদ। চা বিরতির কিছুক্ষণ আগে তাকে নতুন স্পেল করতে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন শান্ত। হাসানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল শরীর থেকে দূরে খেলে স্টাম্পে টেনে আনেন করুণারত্নে।
এই ব্যাটার ১২৯ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৮৬ রান করে সাজঘরে ফেরত যান। তাকে ফিরিয়ে নিজের অভিষেক টেস্টে প্রথম উইকেট পেলেন হাসান। তাতেও অবশ্য সেশনটা শ্রীলঙ্কারই থেকেছে। দ্বিতীয় সেশনে ১২৮ রান করেছে তারা।
প্রথম দুটির চেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে কাটে বাংলাদেশের শেষ সেশন। চা বিরতির পর বাংলাদেশ পেয়েছে দুটি উইকেট। শুরুটা হয়েছে সাকিব আল হাসানের হাত ধরে। স্লিপে দাঁড়িয়ে তার বলে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে কুশল মেন্ডিসকে আউট করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এই ব্যাটার অল্পের জন্য সেঞ্চুরি আফসোসে পুড়েছেন। ১৫০ বলের ইনিংসে ১১ চার ও ১টি ছক্কায় ৯৩ রান করেন তিনি। নতুন বলের প্রথম ওভারে পরের উইকেটটি এনে দেন অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ। ওভারের প্রথম পাঁচ বল ডট দেওয়ার পর ষষ্ঠ বলে স্লিপে ক্যাচ দেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ৭১ বলে ২৩ রান করেন তিনি।
কিন্তু ওই দুই উইকেটের পরও বাংলাদেশের জন্য দিনটি খুব একটা ভালো যায়নি। প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহের পথেই আছে লঙ্কানরা। বাংলাদেশের কেবল এখন সম্বল আশা- দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই যদি আরও কিছু উইকেট তুলে নেওয়া যায়!