বাণিজ্য মেলা জমে উঠলেও ৫ম দিনেও চলছে স্টল নির্মাণের কাজ

বাণিজ্য মেলা জমে উঠলেও ৫ম দিনেও চলছে স্টল নির্মাণের কাজ

রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) চলছে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবারের মেলা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে নির্ধারিত সময়ের কয়েকদিন দেরিতে শুরু হয়।

বাণিজ্য মেলা শুরুর পর প্রথম ছুটির দিন উপলক্ষে মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মেলা একপ্রকার জমে উঠলেও পঞ্চম দিনেও চলছে স্টল নির্মাণের কাজ।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে মেলা প্রাঙ্গণে সরেজমিনে ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।  

বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড় পরিলক্ষিত হয় মেলায়। কিন্তু অনেক স্টলে এখনও চলছে শেষ মুহূর্তে পণ্য সাজানোর কাজ। কিছু স্টলের সামনে মালপত্র নামানোর কাজ চলছে। আবার কিছু স্টলের ভেতরে শ্রমিকরা ব্যস্ত সাজসজ্জার কাজে। যদিও কিছু স্টলের কাঠামো নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ সকল স্টলে এখনো কারিগররা কাজ করছেন।

নির্মাণ কাজ বাকি এমন সব স্টলের ঠিকাদার ও কারিগররা জানান, মেলায় কিছু স্টলের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব স্টলের কাজ শেষ হয়ে যাবে। মেলায় প্রতিবারই কিছু স্টল বসতে দেরি হয়। ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন যে, স্টল দেবে কি দেবে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্য মেলা কর্তৃপক্ষ স্টল বরাদ্দ দিয়ে দিলেও, যারা বরাদ্দ পেয়েছেন তারা অধিক মুনাফায় স্টল তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে সময় লেগে যায়। যে কারণেও স্টল নির্মাণে দেরি হয়।  

বাণিজ্য মেলায় স্টল তৈরির কন্ট্রাক্টরের কাজ করেন কাঠমিস্ত্রি গৌরাঙ্গ। মিরপুর-১২ তে তার এসবের দোকান রয়েছে।  

তিনি বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত বাণিজ্য মেলায় স্টল তৈরির কাজ করছেন। মেলায় স্টল নির্মাণের কাজ তার কাছে নেশার মত। যে কারণে ভালো লাগা থেকে প্রতিবছরই বাণিজ্য মেলার উপলক্ষে মিস্ত্রি ভাড়া করে স্টল তৈরির কাজ করেন। তার অধীনে ৮-১০ জন মিস্ত্রি এবার কাজ করছেন।  

তার মতো এমন আরও ২০-২৫ জন কন্ট্রাক্টর বাণিজ্য মেলায় স্টল তৈরির কাজ করেন বলে জানান তিনি।

মিস্ত্রিদের মজুরি সম্পর্কে গৌরাঙ্গ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি মিস্ত্রিকে দৈনিক ৮০০ টাকা করে মজুরি দেন তিনি। এসব মিস্ত্রি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আনেন।

এই কাঠমিস্ত্রি গৌরাঙ্গ আরও বলেন, মেলার স্টল তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। ৮০-৮৫ ভাগ কাজ শেষ। কয়েকটি স্টল তৈরির কাজ এখনও চলছে৷ সেগুলো ৪-৫ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ডিজাইন ভেদে একেকটি স্টল তৈরি করতে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন তিনি৷ তবে মেলা শেষ হলে এই স্টলগুলো খুলে নিয়ে যাওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ২০-২২টি স্টল তৈরি করেছেন এই কাঠমিস্ত্রি।  

বাণিজ্য মেলা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৪টি স্টল বরাদ্দ নিয়েছেন এমন একজন মো. খোকন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মেলা কর্তৃপক্ষ থেকে স্টল বরাদ্দ নিই। তারপর চাহিদা অনুসারে স্টল তৈরি করে দিই। ২০ বর্গফুটের এক একটি স্টল বিক্রি করি ১০ লাখ টাকায়। বেশিরভাগ স্টলই বিক্রি করা শেষ। কয়েকটি স্টল তৈরির কাজ চলছে, সেগুলো এখনো বিক্রি হয়নি।

বাণিজ্য মেলা সূত্রে জানা যায়, পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) স্টল, প্যাভিলিয়ন, ফুডস্টল, রেস্তোরাঁ, প্রবেশ টিকিট ইজারা, বিজ্ঞাপন প্রচার, এটিএম বুথ, মা ও শিশু কেন্দ্রের ন্যূনতম ফ্লোর ভাড়া ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

গত মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নের ফ্লোরের ন্যূনতম ভাড়া ছিল ২০ লাখ টাকা। যা এবারের মেলায় ন্যূনতম নিলাম মূল্য ধরা হয়েছে ২২ লাখ টাকা। একইভাবে ন্যূনতম ভাড়া তিন লাখ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে সাধারণ স্টলের চার লাখ টাকা ও সংরক্ষিত স্টল চার লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আর ৪৭ শতাংশ বাড়িয়ে সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়নের ন্যূনতম ভাড়া ১১ লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রায় একই হারে স্টল-প্যাভিলিয়নের জামানত বাড়ানো হয়েছে।  

ইপিবির (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো) পক্ষ থেকে জানায়, এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৩৫১টি। যা বিগত বছরে ছিল ৩৩১টি। অত্যাধুনিক সুযোগ- সুবিধা সংবলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩০০ বর্গফুট আয়তনের দুটি হলে (এ ও বি) ১৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  

সেন্টারের প্রধান ফটকের পূর্বপাশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল রয়েছে ৬২টি। হলের পেছনে ফরেন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন এবং প্রিমিয়ার ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল রয়েছে ৫৩টি।  

সেন্টারের মূল কম্পাউন্ডের বাইরে ৬ একর জমির একাংশে ফুড জোন (৩২টি রেস্তোরাঁ ও মিনি রেস্তোরাঁ) এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল রয়েছে ৬২টি।

পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলায় প্রবেশমূল্যও বেড়েছে। এবারের মেলায় প্রবেশের টিকিট মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশুদের টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS