কী করে চোখ ভালো রাখবেন?

কী করে চোখ ভালো রাখবেন?

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের শতকরা ৮৩ ভাগই আমরা পাই চোখের মাধ্যমে। অথচ শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের প্রতি আমাদের অবহেলা চোখে পড়ার মতোই।যত্নহীনতা আর অবহেলার কারণে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্ষীণ হয়ে আসে আমাদের দৃষ্টিশক্তি। অথচ একটু যত্ন নিলেই চোখের অস্বাভাবিক শক্তি আমরা ধরে রাখতে পারি দীর্ঘদিন। সারা দিনে চোখের পেছনে মাত্র কয়েক মিনিট ব্যয় করলেই হলো। যত্ন নেওয়ার পদ্ধতিও বেশ সহজ।

চোখের দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখার জন্য সুষম খাবারের গুরুত্ব অনেক। একটু বেশি করে শাক সবজি খেতে হবে। শীতের দিনে গাজর, বাঁধাকপির পাশাপাশি দেশি ছোট মাছ যেমন মলা-ঢেলা, কাচকি খেতে হবে নিয়মিত। তবে খাঁটি দুধ আপনার চোখের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধপান আপনার চোখের দৃষ্টিকে বহুদিন পর্যন্ত অক্ষত রাখবে। এছাড়া ছানি পড়া বা গ্লুকোমার হাত থেকে রক্ষা করতেও দুধের জুড়ি নেই।

শরীরের অন্যান্য অংগের মতো চোখের জন্যও রয়েছে ব্যায়াম। আলাদা কিছু করতে হবে না, শুধু চেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা কিন্তু শরীর শিথিল করে বসতে হবে। শরীরের কোনো পেশিকে অহেতুক শক্ত করে রাখা যাবে না।

এবার প্রথমে দৃষ্টি সামনে সোজাসুজি রাখুন। ৫ সেকেন্ড পর মুখ সোজা রেখে ডান দিকে ঘোরাবেন চোখের মণি। ৫ সেকেন্ড এভাবেই থাকুন। এবার চোখের মণি ওপরে নিন। ৫ সেকেন্ড পরে চোখের মণি বাম দিকে নিন। একইভাবে ৫ সেকেন্ড পরে চোখের মণি নিচে নিন। নিচের দিকে ধরে রাখুন ৫ সেকেন্ডে।

এতে কিন্তু আপনার চোখ একবার ঘুরে এলো। এভাবে ৫ বার ক্রমান্বয়ে চোখের মণি ডানে, ওপরে, বামে, নিচে রেখে ব্যায়ামটি করুন। এরপর পুরো প্রক্রিয়া উল্টে দিন। অর্থাৎ প্রথমে বামে, তারপর ওপরে, তারপর ডানে, তারপর নিচে। এভাবে ৫ বার ডান থেকে বাম দিকে আবার ৫ বার বাম থেকে ডানে করলেই ব্যায়াম সম্পন্ন হবে।

চক্ষু চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম বেটস ১৯১৯ সালে ‘বেটার আই সাইট উইদাউট গ্লাসেস’ নামে একটি বইয়ে চোখের যত্নের জন্য কয়েকটি বহুমূল্য পরামর্শ দিয়েছিলেন যা পালন করে বিশ্বে বহু মানুষ তাদের দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার বা সমুন্নত করেছেন। বেটস-এর পরামর্শ মতো চোখের যত্নের কয়েকটি সহজ উপায় হলো:

চোখে পানির ঝাপটা: সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হবে চোখে পানির ঝাপটা দেওয়া। বেসিনের সামনে গিয়ে চোখ পুরোপুরি বন্ধ করে প্রথমে ২০ বার কুসুম কুসুম গরম পানির ঝাপটা দিন। এরপর ২০ বার ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। আবার রাতে শোয়ার আগে শেষ কাজ হবে চোখে পানির ঝাপটা দেওয়া। এবারে উল্টোভাবে। অর্থাৎ প্রথম ২০ বার ঝাপটা দেবেন ঠাণ্ডা পানিতে এবং পরের ২০ বার ঝাপটা দেবেন হালকা গরম পানিতে। এতে চোখে রক্ত চলাচল বাড়বে। চোখ হবে প্রাণবন্ত।

চোখ ঢাকা: আরাম করে শিথিলভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। সামনের টেবিলে কনুই রেখে হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢাকুন। এমনভাবে ঢাকুন, চোখের পাতা যেন হাতের তালু স্পর্শ না করে। এরপর খুব মনোহর প্রাকৃতিক দৃশ্য কল্পনা করুন। আগে দেখে মুগ্ধ হওয়া কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য মনের আয়নায় অবলোকন করুন। কাজ করতে করতে বা পড়তে পড়তে যখনই আপনার মনে হবে যে চোখ যেন আর চলছেই না, বা ক্লান্ত হয়ে চোখে ব্যথা করছে, তখনই আপনি ৫ থেকে ১০ মিনিট এভাবে হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢেকে কল্পনায় সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যে হারিয়ে যান।

যে দৃশ্য কল্পনা করছেন, তার রং, গন্ধ, শব্দ পুরোপুরি অনুভব করার চেষ্টা করুন।

ডা. বেটস তার বইয়ে লিখেছেন, মনের চোখে কোনো জিনিস দেখলে বাস্তবে তা আরও বেশি স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

দূরে ও কাছে তাকান: কাছে ও দূরে তাকানোর অভ্যাস বাড়ান। এই তাকানোর অনুশীলন আপনি দুই হাতের দুই আঙুল দিয়েও করতে পারেন। ডান হাতের তর্জনী চোখ থেকে আধ হাত দূরে রাখুন। আর বাম হাত যতটা সম্ভব দূরে নিয়ে তর্জনী সোজা করে রাখুন। এবার প্রথমে ডান অর্থাৎ কাছের হাতের তর্জনীর দিকে দুই চোখ দিয়ে ৫ সেকেন্ড এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুন। ক্ষণিকের জন্যে চোখের পাতা ফেলুন। এরপর আবার দূরে অবস্থিত বাম হাতের তর্জনীর ডগায় এক দৃষ্টিতে ৫ সেকেন্ড তাকান। ক্ষণিকের জন্যে পলক ফেলুন। আবার কাছের আঙুলের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। এভাবে ১০ বার একই অনুশীলন করুন।

পলক ফেলুন: ১০ সেকেন্ড পরপর চোখের পাতা মুহূর্তের জন্যে বন্ধ করার অভ্যাস করুন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে না থেকে মাঝে মাঝে চোখের পাতা পড়তে দিন। এতে চোখ পরিষ্কার ও পিচ্ছিল থাকবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS